সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছর, যা ঘটেছিলো সেদিন

Looks like you've blocked notifications!
সিরিজ বোমা হামলার ফাইল ছবি

দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছর আজ মঙ্গলবার। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন পরিকল্পিতভাবে দেশের ৬৩ জেলায় একই সময়ে বোমা হামলা চালায়। মুন্সীগঞ্জ ছাড়া সব জেলায় প্রায় ৫০০ পয়েন্টে বোমা হামলায় দুজন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর ও র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পর পরই সারা দেশে ১৫৯টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) ১৮টি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) আটটি, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে (আরএমপি) চারটি, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে (কেএমপি) তিনটি, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে (বিএমপি) ১২টি, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে (এসএমপি) ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১টি, রাজশাহী রেঞ্জে সাতটি, খুলনা রেঞ্জে ২৩টি, বরিশাল রেঞ্জে সাতটি, সিলেট রেঞ্জে ১৬টি, রংপুর রেঞ্জে আটটি, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ছয়টি ও রেলওয়ে রেঞ্জে তিনটি।

এসব মামলার মধ্যে ১৪২টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বাকি ১৭টি মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও পুলিশ আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিল ১৩০ জন এবং গ্রেপ্তার করা হয় ৯৬১ জনকে। এক হাজার ৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

পুলিশ জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৯৪টি মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এখন ৫৫টি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। যার আসামি সংখ্যা হচ্ছে ৩৮৬ জন।

এই সিরিজ বোমা হামলার রায় প্রদান করা মামলাগুলো থেকে ৩৪৯ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে আটজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এসব মামলায় জামিনে রয়েছে ১৩৩ জন আসামি।

এ ছাড়া ঢাকায় বিচারাধীন পাঁচটি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ঝালকাঠি জেলার দুই বিচারককে হত্যার জন্য ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ ছয় জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি, আব্দুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ ও সালাউদ্দিনকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

২০০৫ সালের পরবর্তী সময়ে কয়েকটি ধারাবাহিক বোমা হামলায় বিচারক ও আইনজীবীসহ ৩০ জন নিহত হয়। আহত হয় চার শতাধিক। ওই বছরের ৩ অক্টোবরে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের আদালতে জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে তিনজন নিহত এবং বিচারকসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়। এর কয়েকদিন পর সিলেটে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামীর ওপর বোমা হামলার ঘটনায় তিনি এবং তাঁর গাড়িচালক আহত হন। ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় আত্মঘাতী জঙ্গিরা। এতে নিহত হন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে এবং সোহেল আহম্মদ। এই হামলায় আহত হয় অনেক মানুষ।

সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ওই বছরের ২৯ নভেম্বর গাজীপুর বার সমিতির লাইব্রেরি এবং চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে। গাজীপুর বার লাইব্রেরিতে আইনজীবীর পোশাকে প্রবেশ করে আত্মঘাতী এক জঙ্গি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এই হামলায় আইজনজীবীসহ ১০ জন নিহত হয়। নিহত হয় আত্মঘাতী হামলাকারী জঙ্গিও। একই দিন চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে জেএমবির আত্মঘাতী জঙ্গিরা বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে রাজিব বড়ুয়া নামের এক পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়। পুলিশসহ আহত হয় প্রায় অর্ধশত।

এরপর ১ ডিসেম্বর গাজীপুর ডিসি অফিসের গেটে আবারও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে নিহত হন গাজীপুরের কৃষি কর্মকর্তা আবুল কাশেম। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়।

৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নেত্রকোনা শহরের বড় পুকুরপাড় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অফিসের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় আত্মঘাতী জঙ্গি দল। সেখানে স্থানীয় উদীচীর দুই নেতাসহ আটজন নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক।