সিলেটের সব উপজেলা বন্যায় প্লাবিত, দুর্ভোগ চরমে

Looks like you've blocked notifications!
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ। ছবি : সংগৃহীত

টানা বৃষ্টি, আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সব কয়টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আগে ছয়টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছিল। আজ বুধবার বিকেল নাগাদ বাকি সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জেলার সব কয়টি নদীতে পানি বেড়েছে। এদিকে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার কয়েক লাখ মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। এ দুই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

বিকেল ৫টায় সিলেটে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বন্যাপরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি জেলার সব কয়টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কথা জানান।

জেলা প্রশাসক আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘২৩ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হবে। ফলে বন্যাপরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এ পর্যন্ত ২৫০ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। আগে জেলায় ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। এখন তা বাড়িয়ে ২৫২টি করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও বাড়ানো হবে।

দেখা গেছে, সিলেট নগরীর বেশির ভাগ এলাকার বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দিনে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলোও তলিয়ে যায়। আজ বিকেলের পর সব কয়টি উপজেলা প্লাবিত হয়। ,এসব উপজেলার সড়কে পানি ওঠায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের, নষ্ট হয়েছে সবজিখেত ও ফসলি জমি।

সুনামগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ছয় উপজেলার দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। এর মধ্যেই আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ওসমানীনগর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, বিয়ানীবাজার, সিলেট সদর উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।

গতকাল মঙ্গলবার দিনে ও রাতে সিলেট জেলায় বৃষ্টি হয়নি। তবে, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বেড়েছে দুর্ভোগ। বিপর্যস্ত হয়ে আছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিভিন্ন উপজেলায় প্লাবিত এলাকায় বাঁধ, পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেওয়া লোকজন বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও শৌচাগার সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ ও জ্বালানি তেলের দোকান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বাঁধ ও পাকা রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় মানুষজনকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট এখনও পানির নিচে। বাসাবাড়ি ও সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করেছে পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা জানান, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। নতুন করে বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভাঙনের খবর সংগ্রহ করছেন তাঁরা।

সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতার ব্যাপারে এ কে এম নিলয় পাশা জানান, নগরীর জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে ড্রেনেজ সমস্যা। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতিতে নগরীর দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে।

এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সিলেটে আগামী ২০-২১ জুন পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। যে কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া চাল ও শুকনো খাবার বিভিন্ন উপজেলার বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।