সুন্দরবনে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা, নভেম্বরে গণনার প্রস্তুতি
সুন্দরবন ভ্রমণে এসে ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মেলাটা পর্যটকদের কাছে স্বপ্নের মতোই। বাঘ দেখার কৌতূহল নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এলেও বাঘের দেখা পেয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। পর্যটকরা হরহামেশা বাঘের দেখা না পেলেও প্রায়ই দেখতে পান বনপ্রহরীরা। তাই পর্যটকরা ভ্রমণে এসে বনপ্রহরীদের কাছে বাঘ দেখার গল্প শুনে থাকেন।
বনবিভাগ জানায়, সুন্দরবনে দিনের বেলায় বাঘের দেখা মেলার সুযোগ খুবই কম। কারণ দিনে সুন্দরবনের অভ্যন্তর দিয়ে পর্যটকবাহী নৌযান চলাচল ও পর্যটকদের আনাগোনা থাকায় বন্যপ্রাণীরা বনের গহীনে বিচরণ করে থাকে। আর রাত হলে সেগুলো ক্যাম্প ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পুকুরে সুপেয় পানি পান করতে আসে। তাই বিশেষ করে জ্যোৎস্না রাতে পুকুরপাড়ের সুউচ্চ টাওয়ারে বসে ভাগ্যে থাকলে দেখা মিলে যেতে পারে বনের রাজার।
কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন বছরের শুরু থেকে এখন দিনের বেলায়ও বাঘের বিচরণ চোখে পড়ছে পর্যটকদের। তাও একটি নয়, দিনের বেলায় একসাথে কয়েকটি বাঘের নদী পার হওয়া ও নদীর পাড়ে দাঁড়ানো, বসা এবং হাঁটাহাঁটির দৃশ্য ধরা পড়েছে বনবিভাগ, ট্যুরিস্ট গাইড ও পর্যটকদের ক্যামেরার ফ্রেমে। আর যারা চোখে দেখেছেন ছবি ও ভিডিও তুলেছেন, তাদেরই যেন সুন্দরবনের বাঘ দেখার শখ পূরণ হয়েছে। বাঘ দেখায় কারও কারও জীবনের গল্পে রচিত হয়েছে সেরা অধ্যায়।
সম্প্রতি তিনটি বাঘের একসাথে নদী পার হওয়া ও চারটি বাঘের একসাথে বিচরণের দৃশ্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের শ্যালা নদীর একপাড় থেকে সাঁতরিয়ে অন্যপাড়ে তিনটি বাঘের নদীর পার হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে পর্যটক ও বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আর সর্বশেষ গত ১২ মার্চ একই রেঞ্জের ছিটে কটকা এলাকার খালপাড়ে এক জায়গা চারটি বাঘের দেখা মেলে।
এ ছাড়া বাঘের দেখা মিলছে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়িয়া, আন্ধারমানিক, চরাপুটিয়া ও কটকা ক্যাম্প এবং পর্যটন স্পটগুলোতে। প্রায়ই বাঘের দেখা মিলছে এসব ক্যাম্প এলাকায়। আর গত ৯, ১০ ও ১২ ফেব্রুয়ারি করমজলে দেখা মিলেছে জোড়া বাঘ।
মো. আজাদ কবির জানান, সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর বাঘ দেখা যাচ্ছে। তারমধ্যে তিনটি বাঘকে এক সঙ্গে নদী পাড়ি দিতে দেখা, আর এক সঙ্গে চারটি বাঘকে এক জায়গায় খেলা করতে দেখা, বিভিন্ন ক্যাম্পে বাঘের আনাগোনা, পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। এটি খুবই ভালো দিক। এতে বুঝা যাচ্ছে বনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।
আজাদ কবির বলেন, সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাঘ গণনা হয়েছে। ক্যামেরা ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে এ গণনায় তখন বনে ১১৪টি বাঘের অস্তিত্ব মিলে। এর আগে ২০১৫ সালে একই পদ্ধতিতে গণনায় বাঘের সংখ্যা হয়েছিল ১০৬টি। ক্যামেরা ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে ছবি তুলে বাঘের গায়ের ডোরা গুনে ও দেখে গণনা করা হয়। এটাই বনবিভাগের তথ্যমতে আধুনিক পদ্ধতি। কারণ এক মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্টিং যেমন অন্য আরেকজনের সঙ্গে মিলে না, তেমনি একটি বাঘের গায়ের ডোরা অন্য বাঘের সাথেও মিলে না। আর এর আগে গণনা হতো বাঘের পায়ের ছাপ দিয়ে। পায়ের ছাপে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ওই পদ্ধতি বাতিল করা হয়। কারণ শুকনো মাটি ও কাদা মাটিতে এক বাঘের পায়ের ছাপ দুই রকম হয়ে থাকে। এর ফলে ২০০৪ সালের গণনায় বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়ে ছিল ৪৪১টিতে। এ সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি হওয়ায় ওই পদ্ধতি বাতিল করা হয়।
বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, চলতি বছরের নভেম্বরে আবারও শুরু হতে পারে বাঘ গণনার কাজ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত ফান্ড চাওয়া হয়েছে। ফান্ড পেলেই মূলত আগামী নভেম্বরে শুরু করা যাবে নতুন করে বাঘ গণনার কাজ।