সুপ্রিম কোর্টে বিএনপি-আ.লীগ সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, হাতাহাতি, বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এসময় সমিতির সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছেন বলে রয়েছে অভিযোগ। এ ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করেছে দুপক্ষের আইনজীবীরা।
আজ মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুর দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপি-আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। এ সময় একদল আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের কক্ষে দরজা ও জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেন। ঘটনার সময় সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল তার কক্ষে অবস্থান করছিলেন।
এ সময় বিএনপি-আওয়ামী লীগ সমর্থক কয়েক শ’ আইনজীবী সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। বেলা সোয়া ১টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত ধাক্কাধাক্কি, স্লোগান-পাল্টা স্লোগান এবং সুপ্রিম কোর্ট সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিন দুপুর ২টার দিকে সম্পাদের কক্ষে পুলিশ সদস্যরা প্রবেশ করেন। সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল তাদের সাথে সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করেন এবং ঘটনা সম্পার্কে সমিতির সভাপতিকে অবহিত করেন। দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে থেকে চলে যান। তারা সমিতি ভবনের নিচ তলায় প্রবেশপথে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে, এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ সমর্থক চার থেকে পাঁচজন আইনজীবী আহত হয়েছে বলে দাবি করেন সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল। অপরদিকে, বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে সরকার সমর্থদের হামলায় তাদের পাঁচ থেকে ছয়জন আইনজীবী আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
ঘটনার পর আবদুন নূর দুলাল বলেন, ‘সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের মতো ব্যবস্থা নিবে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বারে নির্বাচন নিয়ে যা হয়েছে সবই আমদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়েছে। মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছে। তাদের নির্বাচন করার কোনো মানসিকতা ছিল না। তারা নির্বাচনের আগের দিন থেকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সব কিছু করেছে। তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অপারেট করার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সমস্ত কিছু ব্যর্থ হয়েছে।’
অন্যদিকে, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের শান্তপূর্ণ মিছিলে হামলা করার কারণে বিএনপি সমর্থক বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত ও রক্তাক্ত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একজন আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার অফিস কক্ষ ভাঙচুর করেছেন। ওই আওয়ামী আইনজীবী ফকির সাহেব ও দুলাল সাহেবের বডিগার্ড হিসেবে চলেন। তিনি তাদের পাহারাদার। আজকে আবার তিনিই সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর করেছেন। ভাঙচুর করে আজকে আমাদের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ তথা সাধারণ আইনজীবীদের ঘাড়ে দোষ চাঁপানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আরও বলেন, ‘কথায় কথায় আইনজীবীদের ওপর হামলা হচ্ছে। পুলিশ আসছে, সাদা পোশাকধারী পুলিশ আসছে। এসে আইনজীবীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এ অবস্থা একটা সভ্য সমাজে চলতে পারে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আজ পুলিশ ও আওয়ামী আইনজীবীদের হাত থেকে নিস্তার চাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আজকে তারা নিজেরই হামলার নাটক সাজিয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, তারা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষ জোর-জবরদস্তি করে দখল করে বসে আছে। তাদের পাহারা দেয়ার জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ ও কিছু আইনজীবীদের রাখা হয়েছে। তারা নির্বাচিত নয়, তারা অবৈধভাবে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের চেয়ার দখল করে বসে আছে।’
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘বর্তমান অরাজক-অস্থিতিশীল পরিবেশ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে চলতে পারে না। তাই দেশের স্বার্থে এবং আইনজীবীদের স্বার্থে, আইনের শাসন কায়েমের লক্ষ্যে আমরা প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
উল্লেখ্য, ১৫ ও ১৬ মর্চ সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রহসনের নির্বাচনে ভোট চুরির প্রতিবাদে এবং সমিতির নতুন নির্বাচনের দাবিতে বেশ কিছু দিন থেকে সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনের প্রথম দিন থেকে বিক্ষোভ করছে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরাও সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে পাল্টা বিক্ষোভ করছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের দীর্ঘদিন থেকে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, ধাক্কাধাক্কি, হট্টগোলের কারণে আদালত অঙ্গনের পরিবেশ উত্তপ্ত হচ্ছে।