সুপ্রিম কোর্ট বারে একতরফা নির্বাচন, আ.লীগ প্যানেলকে জয়ী ঘোষণা

Looks like you've blocked notifications!
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যাপক হট্টগোল ও সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোটগ্রহণের প্রথমদিন সংঘর্ষের পর বিএনপিপন্থীরা ভোট না দেওয়ায় একতরফা সভাপতি, সম্পাদকসহ ১৪টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দিনগত রাত ১টার পর নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান খান এ ফলাফল ঘোষণা করেন।

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ৩ হাজার ৭২৫ ভোট এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুন নুর দুলাল ৩ হাজার ৭৪১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।

অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ২৯৩ ভোট এবং সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ৩০৯ ভোট পেয়েছেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এই নির্বাচনকে ‘অবৈধ’ অ্যাখ্যায়িত করে ভোট প্রদান থেকে বিরত ছিলেন।

এছাড়া সহসভাপতি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মোহাম্মদ আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা, ট্রেজারার পদে মাসুদ আলম চৌধুরী, সহসম্পাদক পদে নুরে আলম উজ্জ্বল, হারুনুর রশিদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের মো. সাফায়েত হোসেন সজীব, মহিউদ্দিন রুদ্রু, শফিক রায়হান শাওন, সুভাষ চন্দ্র দাস, নাজমুল হোসেন স্বপন, মো. দেলোয়ার হোসেন, মনিরুজ্জামান রানাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের দুই দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ শেষ হয়। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি মিছিল ও হট্টগোলের জেরে উত্তপ্ত ছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ।

নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ভোটদান থেকে বিরত থেকেছেন। তারা নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানান।

নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির অন্যতম সদস্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ৮ হাজার ৬২০ ভোটারের মধ্যে ৪ হাজার ১৩৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নির্বাচনের প্রথম দিন ২ হাজার ২১৭ জন এবং শেষ দিন ১ হাজার ৯২০ জন আইনজীবী ভোট দিয়েছেন।’

ভোটের শেষ দিন যেমন ছিল

নির্বাচনের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের আশপাশে পাঁচ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল ৯টার পর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আপিল বিভাগে গিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে নির্বাচন নিয়ে নানান অভিযোগ উত্থাপন করে বিচার প্রার্থনা করেন।

তারপর সকাল ১০টা ১০ মিনিট থেকে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে বিএনপিপন্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার ‍রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর দপ্তরে যান। এ সময় সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বসে সুপ্রিম কোর্ট বারে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি।

এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের প্রবেশমুখে মুখোমুখি অবস্থান নেন বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। এ সময় পাল্টাপাল্টি মিছিল-স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয় এবং ধস্তাধস্তি চলতে থাকে। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে হট্টগোল ও হইচই চলে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নীরব ভূমিকায় থাকতে দেখা গেছে।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আবারও মুখোমুখি অবস্থান নেন বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে পাল্টাপাল্টি মিছিল ও স্লোগান। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবশেষে বিকেল ৫টায় শেষ হয় ভোটগ্রহণ।

যা হয়েছিল প্রথম দিন

দিনভর হট্টগোল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের লাঠিচার্জ, ভাঙচুর, পাল্টাপাল্টি মিছিল ও স্লোগানের মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোটগ্রহণ হয়।

নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা ভোট প্রদান করলেও ভোট প্রদান থেকে বিরত থেকেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুর থেকে শুরু হওয়া ভোটে দুই হাজার ২১৭ জন আইনজীবী ভোট দিয়েছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

এদিন নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এই হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। হট্টগোলের কারণে নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরু করা যায়নি। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

সকাল পৌনে ১০টা থেকে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।