‘সৈয়দ আবুল মকসুদ আদর্শের কথা বলতেন, চর্চাও করতেন’

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মরণে বুধবার আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিশিষ্টজনেরা। ছবি : এনটিভি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘সৈয়দ আবুল মকসুদ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে দেখতেন। তিনি আদর্শের কথা বলতেন এবং এর চর্চাও করতেন। অনেকে আদর্শের কথা বলেন কিন্তু সেগুলোর সক্রিয়ভাবে চর্চা করতে খুব একটা দেখা যায় না। তাঁর লেখাগুলো আমার কাছে বড় সম্পদ মনে হয়।’

আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মৃতি সংসদ’ এর আয়োজনে ‘বহুমাত্রিক সৈয়দ আবুল মকসুদ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর একটা গবেষণার ক্ষেত্র ছিল। নবাব সলিমুল্লাহর উপর তিনি আলোকপাত করেছেন। প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নে, অধিকার আদায়ের জন্য অধিকার আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি লেখায় কৌতুক ও রসবোধের চর্চা করতেন। সৈয়দ আবুল মকসুদকে আমাদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে পড়তে হবে, জানতে হবে।’

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বামপন্থী প্রবীণ রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্য, গবেষক, প্রকাশক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, কবি সাজ্জাদ শরিফসহ সৈয়দ আবুল মকসুদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন ব্যক্তি।

ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য জ্ঞান সৃষ্টি করা। পৃথিবীর কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের একটি স্বাধীন দেশের জন্মের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে, একটি সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না হলে আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বহুদিন পিছিয়ে যেত।’

ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘চারিত্রিক অখণ্ডতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা অনেক সময় সৎ থাকতে বাধ্য হই। কিন্তু এই চারিত্রিক অখণ্ডতা সততাকে ছাপিয়ে যায়। এই গুণের কারণে একজন মানুষ তার শিরদাঁড়া শক্ত করে দাঁড়াতে পারে।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, প্রকাশক ও গবেষক মফিদুল হক বলেন, ‘সৈয়দ আবুল মকসুদ বহু দিকে কাজ করেছেন। তিনি বহু মানুষকে নিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। সমাজের যা কিছু বড় রকমের সংকট হয়েছে, সেখানেই তাঁকে সামনের কাতারে দেখা গেছে। তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমাদের বাঙালি সমাজে যে অসাম্প্রদায়িকতা এই চেতনাটাই মকসুদ ভাইকে গান্ধী আশ্রমে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যা রেখে গেছেন সেটা নিয়েই সমাজকে এগিয়ে যেতে হবে।’

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা দুজনে বন্ধু ছিলাম। তিনি ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক। তিনি একাধারে লেখক, গবেষক, সাংবাদিক। নদী, খাল, বিল রক্ষার আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেতা। নারীর উপর সহিংসতা ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদী ছিলেন। আদিবাসীদের পক্ষে লড়েছেন। প্রান্তিক জনগণের বন্ধু ছিলেন।’

সৈয়দ আবুল মকসুদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো স্মৃতিচারণ করে পংকজ ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন আড্ডায় মশগুল ছিলাম। মনের কথা অকপটে বলতে কোন দ্বিধা করতেন না তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নতুনভাবে উন্মোচন করেছেন তিনি। হঠাৎ চলে যাওয়া আজও মেনে নিতে পারিনি।’

উল্লেখ্য, সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও লেখক। তিনি তাঁর গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জন্য সুপরিচিত। তাঁর প্রবন্ধসমূহ দেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবনী ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের বেশি। সৈয়দ আবুল মকসুদ গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পরলোক গমন করেন।