স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে : রাষ্ট্রপতি

Looks like you've blocked notifications!
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কাউন্সিলের ৫১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য দেন। ছবি : ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রায় নেতৃত্বদানের জন্য আগামী প্রজন্মকে স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কাউন্সিলের ৫১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

স্কাউট সদস্যদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, ‘তোমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে স্কাউট আদর্শের প্রতিফলন ঘটাবে এবং দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করবে।’

স্কাউটরা কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে স্কাউট আদর্শের প্রতিফলন ঘটাবে এবং দেশের যেকোনো প্রয়োজনে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আত্মনিয়োগ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গঠনে স্কাউটদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান।

স্কাউটদের স্বেচ্ছাসেবী কাজের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘স্কাউটরা সৃষ্টিকর্তা ও দেশের প্রতি কর্তব্য পালনের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ুর উষ্ণতা রোধে জনসচেতনতা তৈরি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভবনধস ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার কাজসহ জাতীয় দুর্যোগে সবার আগে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের সব উদ্যোগে বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে অংশ নিয়ে দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।’ বাংলাদেশ স্কাউটসকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি তাদের এ সেবাধর্মী কার্যক্রম ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃতি লাভ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে, বিশেষ করে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব আজ বিশ্বব্যাপী ভিন্ন বাস্তবতা তৈরি করেছে।’

রাষ্ট্রপতি বিশ্বব্যাপী স্কাউটস আন্দোলন সম্পর্কে বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করার মানসিকতা তৈরিতে স্কাউটিংয়ের ভূমিকা অনন্য। আমাদের স্কাউটরা নিয়মিত সমাজসেবামূলক কাজের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও আর্তমানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। স্কাউটিংই পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আধুনিক, প্রগতিশীল, সৃজনশীল করে গড়ে তুলতে।’

চিফ স্কাউটদেরকে বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলতে,  বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও যুবদের মাদক, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প থেকে নিরাপদ এবং দূরে রাখতে স্কাউটিং ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে।’

সরকার বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘সরকারের যুগোপযোগী উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নতুন প্রজন্মকে দক্ষ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশে স্কাউট আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।’ 

২০২২ সালে ৬২৬ জন স্কাউট অ্যাওয়ার্ড (প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড),  বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘রৌপ্য ব্যাঘ্র’ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘রৌপ্য ইলিশ’ অর্জনকারী সবাইকে এবং তাদের লিডার ও অভিভাবকদেরও অভিনন্দন জানান চিফ স্কাউট আবদুল হামিদ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, জাতীয় কমিশনার (প্রোগ্রাম) মো. আতিকুজ্জামান এবং নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) উনু চিং এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।