স্বপ্নের উন্মোচন : উদ্বোধন হলো পদ্মা সেতুর

Looks like you've blocked notifications!
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্‌বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

উদ্‌বোধন করা হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্‌বোধন করেন। আর, এর মধ্য দিয়েই রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সেতুবন্ধন রচিত হলো।

মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর আজ দুপুর ১২টার দিকে উদ্‌বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্‌বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

উদ্বোধনের আগে মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধনের পরপরই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।

এর আগে ঐতিহাসিক এ মাহেন্দ্রক্ষণে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন মন্ত্রিসভার সদস্য, দেশের বরেণ্য বক্তিত্ব, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন শেষে স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে দেশবাসীকে স্যালুট জানান।

সেতুটির নির্মাণে সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ড. খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সুবিশাল মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান অনুষ্ঠানের সভাপতি সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং আয়োজক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ড. খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে স্মারক নোট, ডাকটিকেট, স্যুভেনির, উদ্‌বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন।

যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর দুপুর ১২টার দিকে উদ্‌বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজে ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর অংশ দৃশ্যমান হয়।

পরে একের পর এক ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১টি স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে বহুমুখী ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ কাঠামো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করেছে চীনের ঠিকাদার কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদী শাসন করেছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। মোট ৩০,১৯৩৩.৭ কোটি টাকা ব্যয়ে স্ব-অর্থায়নে সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

মূল সেতু নির্মাণের ব্যয় ১২,১৩৩.৩৯ কোটি টাকা (৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার এবং গ্যাস লাইনের জন্য ১০০০ কোটি টাকাসহ) এবং ১৩.৮ কিলোমিটার নদী শাসন কাজের ব্যয় ৯,৪০০০.০ কোটি টাকা।

টোল প্লাজা এবং এসএ-২ সহ ১২ কিমি অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণ ব্যয় ১,৯০৭.৬৮ কোটি টাকা (২টি টোল প্লাজা, ২টি থানা ভবন এবং ৩টি পরিষেবা এলাকাসহ) যেখানে পুনর্বাসনের ব্যয় ১,৫১৫.০০ কোটি টাকা, ২৬৯৩.২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় ব্যয় ১২৯০.৩ কোটি টাকা, কনসালটেন্সি ৬৭৮৩.৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য (বেতন, পরিবহণ, সিডি ভ্যাট এবং ট্যাক্স, ফিজিক্যাল এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি, ইন্টারেস্ট ইত্যাদি) ১,৭৩১.১৭ টাকা।