স্বপ্ন ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের, এ হামলার নিন্দা জানাই : ডা. জাফরুল্লাহ

Looks like you've blocked notifications!
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সাহাপাড়া গ্রামে সহিংসতার ঘটনায় রোববার এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি : এনটিভি

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা অভিযোগের পর সাহাপাড়া গ্রামে সহিংসতার ঘটনায় এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গতকাল রোববার বিকেলে তিনি ওই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, দোকান ও মন্দির পরিদর্শন করেন।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আজ শুধু সংখ্যালঘু নামের কারণে দরিদ্র মানুষের ওপর অত্যাচার চলছে। আমাদের সবাইকে দারিদ্রতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। আমাদের স্বপ্নই ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এ হামলা ও ভাঙচুরের নিন্দা জানাই।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘কোনো সজ্জন মুসলমান, সঠিক মুসলমান অন্য কারও বাড়িতে এ অত্যাচার করতে পারে না। সে মুসলমান নামধারী হতে পারে, সে মুসলিম নয়, সে ইসলামের সেবক হতে পারে না।’

পরিদর্শনে গিয়ে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির গোবিন্দ সাহার পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা সহযোগিতা করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

পরিদর্শনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। তাঁরা স্থানীয় দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ বোরহান উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা বনিরুল ইসলাম বনি, সৈয়দ মিরাজুল ইসলাম নয়নসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা, বাড়িঘর-দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের নিন্দা জানাই। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। যারা এ ঘৃণিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তির দাবি জানাই। আর এ ধরনের হামলা ঘটার পরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়। তাই, এসব ঘটনা দুর্বৃত্তকারীদের উৎসাহ সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে বিচারটা দ্রুত হওয়া জরুরি। তা না হলে দিন দিন উগ্রতা বৃদ্ধি পাবে।’ 

এদিকে, সাহাপাড়ার বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর এবং দুটি মন্দিরে হামলার ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করে লোহাগড়া থানায় মামলা করেন উপপরিদর্শক (এসআই) মাকফুর রহমান। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু হেনা মিলন।

এর আগে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দিঘলিয়ার সাহাপাড়া এলাকার সেই কলেজছাত্রের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

লোহাগড়া আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলমের আদালতে গতকাল রোববার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাকফুর রহমান সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত শনিবার রাতে খুলনা থেকে ওই কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিন রাতে দিঘলিয়া ইউনিয়নের সালাহ উদ্দিন কচি সরদার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় তাঁর নামে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার’ মামলা করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের সাহাপাড়া গ্রামের ওই কলেজছাত্রের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ধর্মীয় অবমাননামূলক মন্তব্য করা হয়েছে অভিযোগ তুলে তাঁর গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানায় বিক্ষুব্ধরা। এর জের ধরে গত শুক্রবার ওই কলেজছাত্রের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এ ছাড়া ওই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। এর পাশাপাশি এলাকার মন্দিরেও ভাঙচুর চালানো হয়।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে এসব ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। এর আগে বিক্ষুব্ধ লোকজন ওই কলেজছাত্রের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে তাঁদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করে। এরপর বিকেল থেকে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিপুল পুলিশ ও র্যা ব মোতায়েন করা হয়।

দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য প্রভাত কুমার ঘোষ বলেন, ‘ওই কলেজছাত্রের ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে—এমন অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা বাড়িঘরে ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলা করেছে। এ ছাড়া বাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়েছে।’

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজগর আলী বলেন, ‘ওই কলেজছাত্র বলেছেন, ফেসবুকের ওই পোস্টটি তিনি করেননি।’ এ বিষয়ে প্রশাসন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আইনগত পদক্ষেপ নেবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এরই মধ্যে এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চোধুরীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।