হবিগঞ্জে দল বেঁধে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয় শিশু বিলালকে
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কদুপুরে মাদ্রাসাছাত্র বিলাল মিয়া (৯) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। শিশু বিলালকে দল বেঁধে বলাৎকারের পর হত্যা করে লাশ ধানের জমিতে ফেলে রেখেছিল খুনীরা। ঘটনার মূল নায়ক লায়েক মিয়া (২২) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে ঘটনার দায় স্বীকার এবং সহযোগীদের নাম প্রকাশ করেছে।
গতকাল শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল ইসলামের কাছে লায়েক মিয়া এই জবানবন্দি প্রদান করে। লায়েক মিয়া বানিয়াচং উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের নুর উদ্দিনের ছেলে। হবিগঞ্জের আদালত পরিদর্শক উমর আলী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার কদুপুর গ্রামের উত্তর পাশে ধান ক্ষেতে নোয়াগাঁও গ্রামের ঈমান উদ্দিন ওরফে গয়বুল্লাহর ছেলে বিলাল মিয়ার লাশ দেখতে পায় নোওয়াগাঁও গ্রামের সুমন নামের এক কৃষক। ওই দিন সকালে তার ধানী জমিতে সার দিতে গিয়ে লাশ দেখতে পেয়ে আশেপাশের লোকজনকে খবর দিলে নিহত বিলালের লাশ শনাক্ত করে তাঁর পরিবার।
নিহত বিলালের বাড়ি নোয়াগাঁও হলেও সে তার পিতার সাথে নানার বাড়ি কদুপুরে থেকে স্থানীয় কদুপুর মিছবা-উল-উলুম মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়াশুনা করতো। ওইদিন রাতে কদুপুর মিছবা-উল-উলুম মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে কদুপুর বাজারে মেলা বসে। বিলাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে মেলাতে খেলনা কিনতে আসে। এ সময় প্রতিবেশী নোয়াগাঁও গ্রামের লায়েক আহমদ হৃদয়ের অটো রিকশা দেখে তাতে ওঠার বায়না ধরে।
এ সময় লায়েক আহমদ হৃদয়ের মাথায় খারাপ বুদ্ধি আসে। সে এ কাজে সহায়তার জন্য আরও তিনজনকে ডেকে নেয়। লায়েক তার অটো রিকশা চালিয়ে কদুপুর গ্রামের নুর মিয়ার বাড়ির পুকুর পাড়ে আসে। সেখানে লায়েক ও আরও তিনজন বিলালকে বলাৎকার করে। বিলাল বাড়িতে গিয়ে এ ব্যাপারে বিচার দিবে বললে লায়েক ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিলালকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। একপর্যায়ে লায়েক বিলালের গলা ও নাক চেপে ধরে। তাছাড়া সাথে থাকা অন্য তিনজন বিলালের হাতে পায়ে ধরাধরি করে বোরো ধানি জমিতে পানি ও কাদার মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে লায়েক বিলালের ঘাড়ে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে কাদার মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে দেয়। অন্য জন বিলালের হাত পা চেপে ধরে রাখে। এক পর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ গোপন করার জন্য চারজন মিলে লাশের উপর কাদা দিয়ে ঢেকে রাখে। তারা চারজন লাশের পাশে বোরো জমির পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে পুনরায় অটোরিকশা করে কদুপুর বাজারে চলে আসে এবং তারা তাদের নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়।
লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে ২৭ জানুয়ারি ভোর পর্যন্ত ঘাতক লায়েকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তারা পুলিশের কাছে ঘটনা স্বীকার করলে শনিবার আদালতে লায়েক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ নুর মিয়ার পুকুর সেচ দিয়ে নিহত বিলাল আহমদ এর পরিহিত প্যান্ট এবং অপহরণ কাজে ব্যবহৃত লায়েক আহমদ হৃদয়ের চালিত মিশুক (অটো রিকশা) জব্দ করে।
বানিয়াচং থানার ওসি অজয় চন্দ্ৰ দেব জানান, চার জন মিলে শিশুটিকে বলাৎকার করে এবং পরে হত্যা করে লাশ ধান ক্ষেতে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। চার জনের মধ্যে তিন জন শিশু এবং ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকারী লায়েক মিয়া প্রাপ্তবয়স্ক। সবাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ব্যাপারে শিশু বিলাল মিয়ার পিতা ঈমান উদ্দিন বাদী হয়ে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।