হাওরের ৮০ ভাগ ধান কাটা শেষ, উঁচু জমিতে শুরু

Looks like you've blocked notifications!
ঈদকে সামনে রেখে নমুনা শস্য কর্তনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষকরা উঁচু জমিতে ধান কাটা শুরু করে। ছবি : এনটিভি

নেত্রকোনায় ফের কমতে শুরু করেছে হাওর এলাকার নদ-নদীর পানি। ইতোমধ্যে হাওরে ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে নমুনা শস্য কর্তনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষকরা শুরু করেছে উঁচু জমিতে ধান কাটা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১০-১২ দিনের মধ্যে সব কৃষকের গোলায় উঠবে ধান। 

গেল কিছুদিন আগে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ী উপজেলার হাওরের পানি বৃদ্ধির কারণে খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলা বাঁধসহ কয়েকটি বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। জেলা, উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় গ্রামবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টিকে যায় বাঁধ। রক্ষা পায় হাওরের কৃষকের একমাত্র ফসল। পুনরায় পানি কমতে শুরু করছে হাওরে। অপরদিকে উঁচু জমিতে ধান ভালো হয়েছে বলে জানান চাষীরা। 

ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানির বেড়ে বাঁধে ফাটল ধরে ফসল হানির আশঙ্কায় দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলেছে হাওর পাড়ের কৃষকরা।

আটপাড়ার কৃষক ইদ্রিছ আলী জানান,যদি বাঁধ ভাঙতো তাহলে আমরা এই জমির ধান কাটতে পারতাম না। পানি না ওঠায় আমরা টানের জমির ধান কাটতাছি।

অপর কৃষক সামছুল আলম বলেন, সামনে ঈদ। ভয়ে আছিলাম আমরার এলাকায় হাওরের বাঁধ ভাইঙ্গা পানি ডুইকা পড়বো। আল্লায় বাছাইছে। ধান কাটতাছি, বাজারে বিক্রি করন লাগবো। নাইলে ঈদ করবাম কেমনে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এফ এম মোবারক আলী জানান,এবছর জেলায় মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে আবাদ হয় ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর। তার মধ্যে ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। পানি কমতে শুরু করেছে। আজ থেকে আটপাড়া ও মদন উপজেলার উঁচু জমিগুলোতে নমুনা শস্য কর্তনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকা ধান কাটা শুরু করছে চাষীরা। ইতোমধ্যে জেলার হাওর ও সমতল মিলে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর পাকা ধান কাটা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান,আগাম বন্যার কবল থেকে বোরো ফসল রক্ষায় ৪টি হাওর উপজেলাসহ ৯টি উপজেলায় ১৮৫ কিলোমিটারব্যাপি নির্মিত হয়েছে ১৩২টি ডুবন্ত বাঁধ। ১৭৫টি পিআইসির  (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টশন কমিটি) মাধ্যমে এই বাঁধগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ১৩২টি বাঁধের মধ্যে এক খালিয়াজুরী উপজেলাতেই ৬২টি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এছাড়া, মদনে ২৩টি, মোহনগঞ্জে ১৪টি, কলমাকান্দায় ২০টি, বারহাট্টায় পাঁচটি, পূর্বধলায় দুটি, দুর্গাপুরে একটি, আটপাড়ায় দুটি এবং কেন্দুয়ায় তিনটি বাঁধ নির্মিত হয়। বাঁধ নির্মাণে চাহিদা অনুযায়ী ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়।

হাওর এলাকায় নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ধনু নদীর পানি খালিয়াজুরী অংশে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় কোনো বাঁধ ভেঙে আজ পর্যন্ত কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়নি। আশা করি কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।