হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে নবজাতক বিক্রি
চাঁদপুরে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে নিজের নবজাতককে বিক্রি করে দিয়েছেন এক অসহায় মা। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় গতকাল বুধবার এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি জন্ম নেয় ওই নবজাতক। মতলব উপজেলার ষাটনল এলাকার নিঃসন্তান এক প্রবাসী দম্পতির কাছে নবজাতককে বিক্রি করা হয়েছে। সন্তান হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় ওই মা। সন্তান ফিরে পেতে চান সমাজের বিত্তবান ও সরকারের সহযোগিতা।
চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের বারোআনি গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকেন গরিব এই মা তামান্না বেগম (২৮)। পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয় পাশের হানিরপাড় গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে আলমের সঙ্গে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিয়ে মেনে না নেওয়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। দুই সন্তানের জননী তিনি। স্বামীও ঠিকমতো তাদের দেখভাল করেন না বলে জানান অসহায় এই মা।
সর্বশেষ তৃতীয় সন্তানের ডেলিভারির সময় হয়ে এলে স্বামী আলম টাকা জোগাড় করতে না পেরে চলে যান। কয়েকদিন বাসায়ও আসেননি বন্ধ করে রাখেন মোবাইল ফোনটিও। এর মধ্যেই তামান্না বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে তার মা ও স্বজনরা মিলে ভর্তি করান স্থানীয় পালস এইড হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। প্রথমে ঋণ করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্তান প্রসব করলেও মুখ দেখা হয়নি তামান্নার।
হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় ৫০ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রি করে দেন তিনি। ছেলেকে বিক্রি করলেও অবুঝ মায়ের মন সন্তানের জন্য কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। তার উপর স্বামী আলম বাড়িতে এসে তার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে অসহায় তামান্না বেগম বলেন, হাসপাতালে অপারেশনের পর পরই টাকা চাওয়া হয়। আমি গরিব মানুষ টাকা দিব কোথা থেকে? আরেকজনের আমাকে বিনামূল্যে রক্ত দিলেও হাসপাতালে রক্তের বিল দুই হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে অপারেশন ওষুধপত্র এবং আনুষঙ্গিক খরচ ৪০ হাজার টাকা হয়। কারো কথায় আমি সন্তান দেইনি। পরে যখন হাসপাতালের বিল পরিশোধ এবং নিজের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছিলাম না, তখনই সন্তান বিক্রি সিদ্ধান্ত নেই। যদিও এর আগে কাউসার নামে একজন সন্তান বিক্রি করব কি না আমার কাছে জানতে চায়। পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে একজনের সঙ্গে কথা বলে ৫০ হাজার টাকায় আমার শিশুকে বিক্রি করে দেই।
তামান্না বেগম আরও বলেন, এখন আমার স্বামী আমাকে তার সন্তান ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তা না হলে আমার সঙ্গে আর সংসার করবে না বলেও হুমকি দিয়েছে। তখন টাকার জন্য সন্তানকে বিক্রি করলেও এখন আমার সন্তানের জন্য কষ্ট হয়। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। জানিনা আমি আমার সন্তানকে পাব কিনা। কারণ তারা আমার কাছ থেকে স্ট্যাম্প করেছে এ সন্তান আমি আর কোনো দিন দাবি করতে পারব না। তার উপর ৫০ হাজার টাকা আমার মতো গরিব মানুষ কীভাবে তাদের দেবে। জানি না আমার সন্তান এখন কোথায় আছে, কেমন আছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের মালিক প্রতিনিধি লিমন সরকার বলেন, বাচ্চা বিক্রির বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুই অবগত নয়। তারা আমাদের বিশেষ কিছু জানায়নি। সর্বশেষ গত দুদিন আগে যখন তিনি অপারেশনের সেলাই কাটতে আসেন তখনও আমরা তার বাচ্চা কেমন আছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান বাচ্চা ভালো আছে।
এদিকে স্থানীয়দের দাবি, মায়ের বুকে তার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে সমাজের বিত্তবান ও সরকারের এগিয়ে আসা দরকার।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ কোনো আবেদন করেনি। আমি খোঁজ নিচ্ছি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।