হিলিতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

Looks like you've blocked notifications!
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর। ছবি : ফোকাস বাংলা

দেশের সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় করোনার সংক্রমণের হার বেড়ে গেলেও পিছিয়ে নেই দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত। এখানেও বাড়ছে সংক্রমণের হার। ভারতফেরতসহ এই পর্যন্ত ২৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

গত ১৯ মে থেকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে আটকেপড়া ১৯০ জন বাংলাদেশি যাত্রীর মধ্যে তিনজনের শরীরে করোনারভাইরাস পাওয়া গেছে। ফলে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

এদিকে, সীমান্তের এই স্থলবন্দর দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং করোনার সনদ ছাড়াই ভারত থেকে প্রতিদিন অবাধে প্রবেশ করছে আমদানিপণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেলপাররা। এ অবস্থায় বন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্ট কর্তৃপক্ষ এই বন্দর দিয়ে ১৪ দিনের জন্য আমদানি-রপ্তানিসহ সব কার্যক্রম বন্ধের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন।

স্থানীয় শাহ সুলতান রনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম মণ্ডল ও শাহ আলম জানান, ভারত থেকে যেসব পণ্যবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করছে সেসব চালক ও হেলপারদের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। আমরা ভয়ে আছি তাদের মাধ্যমে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। আমরা দাবি জানাচ্ছি ভারত থেকে দেশে ফেরা বাংলাদেশি যাত্রীদের মতো ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেলপারদের করোনা পরীক্ষা করা হোক।

গত দুই দিন ধরে বন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করে দেখা গেছে, আগের মতো মানুষেরা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অধিকাংশ মানুষ হাট-বাজারে ও রাস্তায় মুখে মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করছেন। সীমান্তের জিরোপয়েন্ট থেকে বন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা পোর্টের ওয়্যারহাউজের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। আমদানি পণ্য নিয়ে ভারতীয় ট্রাকচালকেরা বন্দরে প্রবেশ করছেন। এরপর তারা পানামা পোর্টে ঢুকে ট্রাক রেখে বন্দরের স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে মিশে চলাফেরা করছেন। তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। এরফলে বন্দরের বিভিন্ন পেশায় কর্মরত লোকজনেরা করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।

এ বিষয়ে হাকিমপুর পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, ‘আমি মেয়র হওয়ার সুবাদে জনগণের সার্বিক সুবিধা-অসুবিধা দেখা আমার দায়িত্ব। ভারতীয় চালক ও হেলপাররা করোনার কোনো নেগেটিভ সনদ ছাড়াই বন্দরে প্রবেশ করছে। এ কারণে আমি সম্প্রতি স্থলবন্দর গেটে অবস্থান করে এক ঘণ্টার মতো ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে ব্যবসায়ীরা কয়েকটা দিন সময় চেয়ে বলেছেন ভারতীয় ট্রাক চালক ও হেলপাররা করোনা টিকা নেওয়ার সনদ নিয়ে প্রবেশ করবে। কিন্তু নিদিষ্ট সময় পার হলে আমরা হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেব।’

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ জানান, দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ১৫ দিনের সময় নিয়েছেন। এর মধ্যে ১১ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। বাঁকি দিনের মধ্যে তারা যদি প্রক্রিয়া শুরু না করে তাহলে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান বলেন, ‘ভারত থেকে দেশে ফেরা প্রতিটি যাত্রীর র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। একইসঙ্গে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আরটিপিসিআর টেস্টের জন্য দিনাজপুর মেডিকেলে পাঠানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই পথ দিয়ে আসা যাত্রীদের তিনজনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। তবে তারা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে হিলিতে করোনা রোগী বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত ২৩ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর এ আলম জানান, হিলিতে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে গত ৩০ মে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মিটিং করে অবগত করা হয়েছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, হিলি স্থলবন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক বলেন, ‘বর্তমানে পোর্ট ঝুঁকিপূর্ণ। পোর্টের আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আমরা ১৪ দিনের জন্য বন্দরে কঠোর লকডাউন চাচ্ছি। এজন্য ভারত থেকে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে।’