হুদা কমিশনও কুমিল্লা সিটির ভোটে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন

Looks like you've blocked notifications!
গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে ভোটারদের লাইন। ফাইল ছবি

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। এ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর পর থেকে ভোটে আস্থাহীনতার কথা বলতে শুরু করেন অনেকে। ঠিক এমন একটি সময়ে ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন।

হুদা কমিশন ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটির ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। নির্বাচনের আগে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, ‘হুদা কমিশন প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভোটের আস্থাহীনতার সংকট কেটে যেতে পারে।’

কুমিল্লা সিটির ভোটই ছিল নতুন কমিশনের সবচেয়ে বড় ভোট। ওই পরীক্ষায় সফলভাবে উৎরে যায় হুদা কমিশন। টুকটাক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়া নির্বাচন নিয়ে কোনো পক্ষই তেমন প্রশ্ন তোলেনি।

ভোটগ্রহণ শেষ হলে কে এম নূরুল হুদা প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় আনন্দমুখর পরিবেশে ও বিপুল ভোটারের ভোটদানের মধ্য দিয়ে কুসিকের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।’

সে সময় সিইসির এ বক্তব্য নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়নি। তবে, তার পর নূরুল হুদার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হওয়া অধিকাংশ নির্বাচন নিয়েই মানুষ অধিকতর সমালোচনা করেছেন। এমনকি ‘দিনের ভোট রাতে’করার অভিযোগও করে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল।

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২৫ এপ্রিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোটের তফসিল ঘোষণা করে নতুন কমিশন। গত কমিশনের মতো কুমিল্লা সিটির ভোটই এ কমিশনের প্রথম বড় ভোট ছিল।

গতকাল বুধবার তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় কুসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এ ভোটের পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন পরিস্থিতি বেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে এবং কোনো ধরনের সংঘর্ষ ছাড়াই সম্পাদিত হয়েছে।’

যেসব গণমাধ্যমকর্মী কুমিল্লা সিটির নির্বাচন মাঠ থেকে কাভার করেছেন, তাঁরাও এ ভোটকে ‘তুলনামূলক ভালো ভোট’বলেছেন। শুধু তারা নন, স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ভোটের দিন বলেছিলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ফলাফলে জয়-পরাজয় যাই হোক, আমি মেনে নেব।’ তাঁর মতো অধিকাংশ প্রার্থীই সুষ্ঠু ভোটের কথা বলেছেন। যদিও পরে তিনি সুর পাল্টে ভিন্ন কথা বলেছেন।

গতকাল দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ফলাফল ঘোষণা শুরু করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তিনি মোট ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৯টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন।

বাকি ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি হলে এরপর হলরুমে হট্টগোল শুরু হয় আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থীর ভোটার ও সমর্থকদের মধ্যে। তারপর আরও দুটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। কিন্তু বাকি আরও চারটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি করেন তিনি।

পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ১০৫ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণায় বলেন, ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে মনিরুলকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক (রিফাত)। এজন্য নির্বাচনের ফল নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন মনিরুল হক সাক্কু ও তাঁর সমর্থকরা।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও এখন দেখার বিষয়, পরের সব ভোটে নূরুল হুদা কমিশনের মতো বিতর্কের জন্ম দিবেন, না কি ভোটে মানুষের আস্থা ফেরাতে কাজ করবেন।