১০ বছর পর বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ : সায়েম খান
‘আগামী ১০ বছরে বিশ্ব যেখানে যাবে, বাংলাদেশ সেখানে নেতৃত্ব দিতে পারে, আমি সেই স্বপ্নটাই দেখি। আমি এই স্বপ্ন শুধু আমার চোখ দিয়ে দেখতে চাই না, এদেশের ১৮ কোটি মানুষ তাদের চোখ দিয়ে, হৃদয় থেকে এই অনুভূতি নিসৃত হোক, যেন বাংলাদেশ আগামী বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে।’
এ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সায়েম খান জন্মগ্রহণ করেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায়। তিনি গোপালগঞ্জের দশপল্লী এ. কে. উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রাজধানীর মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করেন। এরপর ২০০৬-৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ এবং আইন বিভাগ থেকে ডিগ্রি নেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন সায়েম খান। তারই ধারাবাহিকতা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও অব্যাহত রাখেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের (সোহাগ-জাকির) কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তরুণ নেতা সায়েম খান আওয়ামী লীগের বিগত কমিটিতে বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির সদস্য হিসেবেও। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এনটিভি অনলাইন বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বিশেষ সাক্ষাৎকারের পঞ্চম পর্বে কথা বলেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপনডেন্ট ফখরুল শাহীন।
এনটিভি অনলাইন : মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একজন তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সায়েম খান : আপনি যদি দেখেন বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। বঙ্গবন্ধুর জন্মগ্রহণের সঙ্গে এ জাতির মুক্তির সনদ লেখা ছিল। বঙ্গবন্ধুর জন্মের ৫০ বছর পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ঠিক তার ৫০ বছর পরে ২০২১ সালে এসে স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিববর্ষ পালন করছি। কালের এই পূর্ব নির্ধারিত বিষয়গুলোর সাক্ষী হতে পেরে এবং সেগুলো বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ঠিক সেই মুহূর্তে এ রকম একটি সময়ের সাক্ষী হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান তরুণ মনে করছি।
এনটিভি অনলাইন : জাতির পিতা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে?
সায়েম খান : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি তার অধিকার আদায় করে এবং স্বাধীনতা অর্জন করে। জাতির পিতার সময় অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছিলেন। কিন্তু তারা কেউই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে সেটির নেতৃত্ব দিতে পারেন নাই। ওই সময় বঙ্গবন্ধু এবং অন্যদের মধ্যে পার্থক্য ছিল তারা মানুষের কাছে যেতেন না, কিন্তু বঙ্গবন্ধু মানুষের কাছে যেতেন। বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের কথা চিন্তা করতেন এবং সে জন্যই মাত্র নয় মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন। এই দেশের পরতে পরতে তাঁর ছোয়া রয়েছে। এ দেশের নামকরণ কিন্তু তাঁরই দেওয়া। পাকিস্তান শাসনামল থেকেই তিনি একটি স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন দেখেন। বঙ্গবন্ধু যে রুপরেখা দিয়ে গেছেন সেটা তিনি সম্পূর্ণ করার আগেই ১৯৭৫ সালে পরিবারসহ তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। মাঝখানে স্বৈরাচারী, সামরিক শাসনের কাঁধে ভর করে পেছনের দিকে না হাঁটতো তাহলে হয়তো স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আমরা বলতে পারতাম দেশ আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হয়েছে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে ৩০তম অর্থনৈতিক দেশ, ২০৩৫ সালে হবে ২৫তম অর্থনৈতিক দেশ ও ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আমরা সেই চূড়ায় দেখতে চাই।
এনটিভি অনলাইন : বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্নীতির খবর প্রচার হচ্ছে। এ বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
সায়েম খান : আওয়ামী লীগ সরকার টানা এক যুগ ক্ষমতায় আছে। টানা ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না, এই ২১ বছর আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে অনেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। তাহলে এই ২১ বছর যে তারা ক্ষমতায় ছিল এটাও তাদের গৌরবের কিছু না। গৌরব যুক্ত হয়েছে তখন যখন আওয়ামী লীগ এই ১২ বছরে বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছে, উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে এবং একের পর এক আর্থসামাজিক সব সূচকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে বিশ্বের বুকে বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা এক যুগে যা করেছেন, তা যেন ৩০ বছরে ক্ষমতায় থেকে তারা করতে পারেনি সেটা ছিল গ্লানিকর, ঠিক তেমনি এই ১২ বছরে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা আসলেই গর্বের বিষয়।
এনটিভি অনলাইন : সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই বিষয়টাকে একজন তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে আপনি কিভাবে দেখছেন?
সায়েম খান : আমরা বাঙালি মুসলমান। এই বাঙালি মুসলমানের আলাদা একটা সংস্কৃতি আছে। ইসলাম কখনো নির্দিষ্ট গণ্ডির কথা বলে না, ইসলাম বলে উম্মাহর কথা। আজকে মুসলমানরা সারা পৃথিবীতে নির্যাতিত। আজকে মুসলমানদের মূল কেন্দ্র যেথায় সেখান থেকে মুসলিমকে ওপরের দিকে তোলার জন্য বাঙালি মুসলমানরা ভূমিকা রাখবে। যারা মুসলিম উম্মাহর কথা না ভেবে নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে তারাই এদেশের শত্রু। বাঙালি মুসলমান আগামী বিশ্বে পৃথিবীতে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করবে৷
এনটিভি অনলাইন : একজন তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশকে কোথায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
সায়েম খান : এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে লক্ষ্য বা গন্তব্য সেটা কারোর একার পক্ষে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আমাদের সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। আমরা প্রতিটি বাঙালি যদি বুকে হাত রেখে বলতে পারি আমিই মুজিব, শুধু এটা বলার জন্যই বলা না, এই আদর্শ ধারণ করে যদি বলতে পারি আমি মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ নির্মাণে মুজিব আদর্শের এক যোদ্ধা হিসেবে অকুতোভয়ভাবে লড়ে যেতে চাই, এই কথাটা যদি আমরা বুক চেতিয়ে বলতে পারি, তাহলে আমি মনে করি বাংলাদেশ আর থেমে থাকবে না। একজন তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে আগামী ১০ বছরে আমি বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চাই এটা বড় প্রশ্ন নয়, বড় প্রশ্ন হলো আগামী ১০ বছরে বিশ্ব যেখানে যাবে বাংলাদেশ সেখানে নেতৃত্ব দিতে পারে, আমি সেই স্বপ্নটাই দেখি। আমি এই স্বপ্ন শুধু আমার চোখ দিয়ে দেখতে চাই না, এদেশের ১৮ কোটি মানুষ তাদের চোখ দিয়ে, হৃদয় থেকে, এই অনুভূতি নিসৃত হোক যেন বাংলাদেশ আগামী বিশ্ব নেতৃত্ব দিবে এবং আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তাদের জন্য কাজ করে যেতে চাই।