১৪ বছরেও সমাপ্ত হয়নি সিডরে স্বজনহারাদের প্রতীক্ষা

Looks like you've blocked notifications!
২০০৭ সালে সিডরের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জনপদ। ছবি : এনটিভি

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। ভয়াল সিডরের প্রলয়ংকরী তাণ্ডবের পর উপকূলের নদী তীরে স্বজনদের প্রতীক্ষা যেন এখনও শেষ হয়নি। তাদের অশ্রুর স্রোতও যেন থামেনি, ফুরোয় না। ১৪ বছরেও সমাপ্ত হয়নি সিডরে স্বজনহারাদের প্রতীক্ষা।

সিডরের নির্মম বলি সাতক্ষীরা শহরের কুখরালির কেনা বৈদ্য। তার স্ত্রী পদ্মা রানী আর তাদের দুই সন্তান সাগর ও তুফান এখনও অপেক্ষায় থাকে, কখন ফিরবে সাগরে যাওয়া তাদের প্রিয় মানুষটি। সেই ভয়াল থাবার পর থেকে তাদের এভাবেই কাটছে দিনের পর মাস, মাসের পর বছর আর বছর।

অপরদিকে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসা সেইসব জেলে আজও শিউরে ওঠেন সাগরে তিন দিন ভাসমান থেকে জীবন নিয়ে ফিরে আসার ভয়াল স্মৃতি রোমন্থনে।

সাগর জলে মাছ ধরা ছাড়াও বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, দুবলার চর, আলোরকোলসহ নানা স্থানে কর্মরত সাতক্ষীরার ২৩টি প্রাণ সিডর সাগরের নীল জলে নিভিয়ে দিয়েছিল। আর কত মানুষ যে সাগরে ভেসে গিয়েছিল তার হদিস মেলেনি গত ১৪ বছরেও।

মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া দাদনে আটকাপড়া কুকরালির রতন বৈদ্যর পরিবার সাগরে মাছ ধরে সংসার নির্বাহ করত। সেদিন রতন ও তার ছেলে কেনা বৈদ্য সাগরে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মাছ ধরতে যান। সিডরের আঘাতে রতন বৈদ্য প্রাণে বেঁচে ফিরলেও চিরদিনের মতো হারিয়ে যায় তার ছেলে কেনা বৈদ্য। রতন বৈদ্য আজও সেই শোক বয়ে বেড়াচ্ছেন। এখনও তার পরিবার তার পথ চেয়ে থাকে কেনা বৈদ্যর জন্য। সাগরে ভাসমান ড্রামের সঙ্গে নিজেকে রশি দিয়ে বেঁধে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় নিশ্চিত মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে প্রাণে রক্ষা পাওয়া তালার মালোপাড়ার মিন্টু ও উত্তম সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে জানান, একই সময় তার বাবা গৌর হালদার ও কাকা অজিত হালদার মৃত্যুর মুহূর্তে চিৎকার করে বলেছিলেন, তোরা বেঁচে থাকিস।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পদ্মপুকুরে খোলপেটুয়া নদীতে শিক্ষক বাবা ইব্রাহীমকে বাঁচাতে গিয়ে সলিল সমাধি হয় ছেলে আইউব আলীর। ভয়ঙ্কর এই জলোচ্ছ্বাসের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় বহু প্রাণ।

সাতক্ষীরায় সিডরের আঘাত জোরালো না হলেও জেলার বাইরে কর্মরত তালার অজিত, গৌর, গোবিন্দ, কুড়িকাহনিয়া ও শ্রীপুরের আমিরুল ও লাভলু, বড়দলের সন্যাসী, জয়নগরের লুৎফর রহমান, রসিদ, লালু হালদার, সাঈদুর রহমান, আবদুল, নজিবুল, ফিরোজা, আনারুল, আয়েশা, দাঁতনেখালির আফসার, বড়কুপোটের শামীম হোসেন, খোকন রাজবংশীসহ অনেকেরই জীবন প্রদীপ নিভে যায়। এদের কারও দেহ পাওয়া গেছে। কেউ বা এখনো নিখোঁজ। তাই স্বজনরা ভাবে, তারা বেঁচে আছেন। তাদের অপেক্ষাতেই কাটে দিন মাস বছর।

সেই ভয়াল স্মৃতি নিয়ে এবারও ১৫ নভেম্বর পার হলো। স্বজনহারা পরিবারগুলোর অশ্রু যেন শেষই হয় না। ১৪ বছর পরও সিডরে নিখোঁজ স্বজনদের প্রতীক্ষায় থাকারও যেন শেষ নেই।