১৯ বছর পর দেশে নারীর সংখ্যা বাড়বে : পরিসংখ্যান ব্যুরো
দেশে আগামী ১৯ বছর পরে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই জরিপের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, আর মাত্র ১৯ বছর পর দেশে নারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১০ কোটি ৩১ লাখ ১৭ হাজার, আর পুরুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের আদমশুমারির ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ৫০ বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৪১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হতে পারে ২০ কোটি ৫৬ লাখ ৩৫ হাজার। ২০৬১ সালের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার। তখন দেশে নারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ কোটি ১৫ লাখ ২৯ হাজার। আর পুরুষ থাকবে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৬৪ হাজার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের সহায়তায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য শাখার পরিচালক মাসুদ আলম বলেন, বিভিন্ন ধরনের জনসংখ্যাভিত্তিক মডেল বিবেচনায় এনে জনসংখ্যার পূর্বাভাস দিয়েছি। এই প্রতিবেদনে শ্রমবাজার, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এসব খাতের বিশ্লেষণও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী হলেও লিঙ্গভেদে পুরুষ প্রতিবন্ধী ৩ দশমিক ২৯ এবং নারী প্রতিবন্ধী ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
জরিপ অনুসারে, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামে প্রতিবন্ধী বেশি। এই হার গ্রামে ২ দশমিক ৯২ এবং শহরে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ার ঝুঁকি। শূন্য দশমিক ৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকাংশই মূলধারার জাতীয় উন্নয়ন থেকে বাদ পড়েন। নেতিবাচক মনোভাব এবং দারিদ্র্যের মাধ্যমে বেড়ে ওঠায় নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হন তারা। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিও বেছে নেন। ভালো ও সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে তারা দারুণ অবদান রাখেন। তারা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করতে পারেন। শিশু প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ৪০ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা পায় আর ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষা পায়।
জরিপে আরও জানা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধিতার হার সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার শূন্য দশমিক শূন্য ৪, মানসিক অসুস্থতা শূন্য দশমিক ২৪, দৃষ্টিশক্তি প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৩৯, বাকপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১১, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১৪, শ্রবণ প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১৯, সেরিব্রাল পালসি শূন্য দশমিক শূন্য ৬, ডাউন সিনড্রোমের প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ০০৩ শতাংশ, বধির-অন্ধত্ব শূন্য দশমিক ১০, একাধিক প্রতিবন্ধিতা শূন্য দশমিক ২৬ এবং অন্যান্য অক্ষমতা শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ।
প্রতিবন্ধিতার হারের দিক থেকে বেশি খুলনা বিভাগে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ, কম সিলেটে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ। এছাড়া রংপুরে ৩ দশমিক ৫৪, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৩৫, বরিশালে ২ দশমিক ৪৪, চট্টগ্রামে ২ দশমিক ৪১ এবং ঢাকায় ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
খুলনায় পুরুষ সর্বোচ্চ সংখ্যক হারে প্রতিবন্ধী ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, রংপুরে এ হার ৪ দশমিক ০৯ শতাংশ। এর অর্থ খুলনায় ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ৪ দশমিক ২৭ জন প্রতিবন্ধী, রংপুরে ৪ দশমিক ০৯ জন। সিলেটে পুরুষ প্রতিবন্ধীর হার ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
অন্যদিকে নারী প্রতিবন্ধীর হার বেশি রংপুরে ২ দশমিক ৯৮, রাজশাহীতে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। নারী প্রতিবন্ধীর হার কম সিলেটে ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
জরিপের আগের তিন মাসে ৬১ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন। এদের মধ্যে ২৬ শতাংশ পেয়েছেন সরকারি হাসপাতালের সেবা, ৭১ দশমিক ৬০ শতাংশ পেয়েছেন বেসরকারি হাসপাতালের সেবা, এছাড়া এনজিও পরিচালিত হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। মাত্র ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রতিবন্ধী বাড়িতে নিজেদের চাহিদা অনুসারে স্যানিটেশন সুবিধা পান।
যথাযথ কর্তৃপক্ষের সনদ ও নিবন্ধন আছে মাত্র ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধীর। ৩৩ শতাংশ প্রতিবন্ধী পান তাদের ভাতা।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকাংশই মূলধারার জাতীয় উন্নয়ন থেকে বাদ পড়েন। নেতিবাচক মনোভাব এবং দারিদ্র্যের মাধ্যমে বেড়ে ওঠায় নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হন তারা। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিও বেছে নেন। ভালো ও সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে তারা দারুণ অবদান রাখেন। তারা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করতে পারেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ কর্মরত। কর্মরত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বেশিরভাগই গ্রাম এলাকায় থাকেন।