২০ বছরে এনটিভি, আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

Looks like you've blocked notifications!
২০ বছরে পদার্পণ করল এনটিভি

সাফল্যের সঙ্গে ১৯ বছর পেরিয়ে ২০ বছরে পদার্পণ করেছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি। এখন এনটিভি আরও নতুন, আরও তরুণপ্রাণ, আরও অগ্রগামী—দর্শকের পছন্দের শীর্ষে।

আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি!—প্রিয়জনের সঙ্গে বারবার দেখার আকুতি মনুষ্যহৃদয়ে রূপসনাতন। কবি জীবনানন্দ দাশের সেই বিস্ময়বোধকে বুকে রেখে আবার দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এনটিভি পরিবার উদযাপন করছে তার শুভ জন্মক্ষণ।

২০০৩ সালের ৩ জুলাই ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’ স্লোগান নিয়ে গণমাধ্যম দুনিয়ায় পদার্পণ এনটিভির। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, আগামীর কথা স্মরণে রেখে স্বদেশের চেতনা বুকে বৈশ্বিক ভাবনায় প্রতিনিয়ত ঋদ্ধ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

জন্মক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে ব্যক্তি হোক বা প্রতিষ্ঠান। মানবজীবনের বিকাশের যেমন ক্রমপর্যায় রয়েছে, তেমনই প্রতিষ্ঠানের বিকাশেরও রয়েছে ক্রমোত্তরণ বা বিকাশের পর্যায়। প্রতিষ্ঠানের জন্মক্ষণ এ কারণে আরও গুরুত্বপূর্ণ যে নানা সম্ভাবনা ও বিকাশের পর্যায়গুলোর লক্ষণ শুরুতেই এক ঝলক দেখিয়ে দেয়। সেটা দেখিয়েছিল এনটিভি। আর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এনটিভি যুক্ত হয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্রে।

এই দীর্ঘ পথচলায় এনটিভি কুড়িয়েছে অগণিত দর্শকের ভালোবাসা। দেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। দর্শকের অবিরাম তথ্য ও বিনোদনের চাহিদা পূরণ, দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা ও রুচিশীল বিনোদনের মাধ্যমে সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়াই ছিল এনটিভির অন্যতম প্রয়াস। ছিল ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সুস্থ মানস। ১৯ বছর পূর্তির এই শুভ ক্ষণে দর্শক-শ্রোতা ও পাঠকের ভালোবাসাই প্রমাণ করে, সঠিক পথেই আছে এনটিভি। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ঠাঁই না দিয়ে, নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ও সঠিক তথ্য সরবরাহে দৃঢ়প্রত্যয় এনটিভির।

আজ ৩ জুলাই, রোববার এনটিভির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। বাণী দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। শুভকামনা জানিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা কবি, শিল্পী-সাহিত্যিক, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, ক্রীড়াব্যক্তিত্ব, বিনোদন অঙ্গনের সারথিসহ অনেকেই। দেশ-বিদেশের অগণিত দর্শকের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী।

এনটিভি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রুচিশীল অনুষ্ঠান পরিবেশন করছে : রাষ্ট্রপতি

এনটিভির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন এনটিভির ১৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ, কলাকুশলী, সংবাদকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’

গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের বিকাশ, জনমত গঠন এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমান সরকার অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। গণমাধ্যম যাতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা একান্ত অপরিহার্য। পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোকে দেশের সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠ অনুষ্ঠান প্রচারে এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যমসমূহ দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অধিকতর দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।’

এনটিভির প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে—এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে এনটিভি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও রুচিশীল অনুষ্ঠানমালা এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে। এর মাধ্যমে তারা তুলে ধরছে বাঙালি সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। আমি আশা করি, সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত রেখে সৃজনশীল পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এনটিভি বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী দর্শকদের মাঝে একটি বিশেষ স্থান করে নেবে।’

এনটিভির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার

এনটিভির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ১৯তম বছর পূর্ণ করে ২০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি এনটিভির পরিচালনা পর্ষদ, সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ী ও কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র কর্তৃক সংবাদক্ষেত্রে স্বাধীনতা এবং প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতাসহ চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই দেশে গণমাধ্যমের বিকাশ ও উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরাই প্রথম দেশে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চালুর অনুমোদন দিই। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ৪৫টি টেলিভিশন, ২৮টি এফএম এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও পরিচালিত হচ্ছে, যার বেশির ভাগই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অনুমোদন দিয়েছে। আমরা ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ প্রণয়ন করে এর অধিক্ষেত্রাধীন তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, ২০১৪’ এবং জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা, ২০১৭’ প্রণয়ন করেছি। আমরা সাংবাদিকদের কল্যাণে ‘ বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ স্থাপন করেছি এবং গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন-২০২২’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক, কর্মচারী ও প্রেস শ্রমিকদের কল্যাণে ইতোমধ্যে নবম ওয়েজবোর্ড কার্যকর করা হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদেরকেও ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যা অনলাইন মিডিয়া, আইপিটিভি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক প্রসারে ও তথ্যপ্রবাহে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ দেশের সম্প্রচার জগতে বিরাট সুযোগের সৃষ্টি করেছে। আমাদের দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল এখন অনেক সাশ্রয়ী খরচে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরা মহাকাশে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রশিক্ষিত মিডিয়া কর্মী সৃষ্টি এবং এ ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য আমরা ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন বিল (সংশোধন), ২০১৯’ সংসদে পাস করেছি। সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের জন্য পিআইবি’তে ( প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ) বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আমাদের সরকার কর্তৃক ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ফলে গণমাধ্যম ক্ষেত্রে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি বিকাশ ঘটেছে।”

প্রধানমন্ত্রী যুক্ত করেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির যুগে টেলিভিশনকে শুধু বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখলে চলবে না। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও অনুষ্ঠান পরিবেশন করে এবং দেশজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার মাধ্যমে দেশের মানুষের উন্নত মনন গঠনে এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদসহ নানা অপতৎপরতা দমনে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে অবদান রাখতে হবে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, “আজ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশের যে উত্তরণ, সেই গৌরব অর্জনে গণমাধ্যম আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযাত্রী। আমরা ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনে এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, এই প্রত্যাশা করি।”

বাঙালি সংস্কৃতি লালনে এনটিভি অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে : তথ্যমন্ত্রী

এনটিভির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘১৯ বছর পূর্ণ করে ২০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে এনটিভির পরিবারকে আমি অসংখ্য অভিনন্দন জানাই। গত ১৯ বছরের পথচলায় এনটিভি বাঙালির সংস্কৃতিকে লালন করার ক্ষেত্রে এবং সমাজের চিত্র পরিস্ফুটনের ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে।’

ড. হাছান মাহমুদ আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে এনটিভি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ঠিকানায় পোঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের ঠিকানায় পোঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে এনটিভি অনবদ্য ভূমিকা পালন করবে। একই সাথে জাতি গঠনে, সমাজ গঠনে, সমাজের মনন সঠিক খাতে প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মকে প্রত্যয়ী করার ক্ষেত্রে, সর্বোপরি জাতি গঠনের ক্ষেত্রে এনটিভি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে অনবদ্য ভূমিকা পালন করবে। এনটিভির জন্য অনেক শুভকামনা।’

এনটিভির অনুষ্ঠান মানুষের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য : মির্জা ফখরুল

এনটিভির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক চ্যানেলে এনটিভি একটি বিশেষ সময়ে একটা বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, গণতন্ত্রের চর্চা, জনগণের কাছে সঠিক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা; তাদের যে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান—এগুলো এ দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই ১৯ বছরে এনটিভি একটা ম্যাচিউরড চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। এনটিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ প্রত্যাশা করি যে এনটিভি বিগত দিনগুলোর মতোই গণতন্ত্রের চর্চার জন্য ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।’

এই শুভ ক্ষণে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন : এনটিভির চেয়ারম্যান

এনটিভির ২০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে সম্মানিত দর্শক, কেবল অপারেটর, বিজ্ঞাপনদাতা ও সর্বস্তরের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এনটিভির প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী।

পাশাপাশি তিনি এই দীর্ঘ চলায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, শিল্পী-কলাকুশলী সবাইকে ধন্যবাদ জানান। শুভেচ্ছা জানিয়ে উৎসাহিত করায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেন, ‘আজ আপনাদের-আমাদের সবার প্রিয় চ্যানেল এনটিভির জন্মদিন। আজ ১৯ বছর পার করে আপনাদের এ প্রিয় চ্যানেল ২০ বছরে পদার্পণ করছে। আজকের এই শুভ জন্মদিনে আমি পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ, সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবীর নেতৃবর্গ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, কলাকুশলী এবং শিল্পী-সাহিত্যিক সকলকে; বিশেষ করে বিজ্ঞাপনদাতা, কেবল অপারেটর সবাইকে এনটিভি পরিবারের পক্ষ থেকে, এনটিভি পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যাঁরা এ চলার পথে বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, ভুল ধরে দিয়েছেন, আপনাদের এ সহযোগিতা আমাদের কোনও দিন ভোলার নয়।’

আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেন, ‘আপনাদের এ প্রিয় চ্যানেল ২০ বছর যাত্রার পথে, আমাদের সাথে বহু লোক বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। বিভিন্ন লোক বিভিন্নভাবে আমাদের থেকে হারিয়েছি। বিশেষ করে মহামারির সময়। বিশেষ করে মোস্তফা কামাল সৈয়দ, আব্দুস শহীদসহ আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আমরা হারিয়েছি। আমরা তাঁদের স্মরণ করছি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁদের জান্নাত নসিব করুন।’

সবার সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে এনটিভির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদের এনটিভি টিম, নিউজ টিম, প্রোগ্রাম টিম এবং বিভিন্ন কলাকুশলী, আমাদের অনলাইন; সবাই আপনাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে যে সহযোগিতা করেন, পরামর্শ দেন, সেগুলো মাথায় রেখে আপনাদের জন্য অনুষ্ঠান, নিউজ, অনলাইনের নিউজ তৈরি করে থাকেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন মহামারির সময়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের এই কর্মীরা, আপনাদের এই যোদ্ধারা কাজ করেছেন আপনাদের জন্য। সবার আগে সব নিউজ সুন্দরভাবে আপনাদের মাঝে যেন উপস্থাপন করতে পারে, সে জন্য নিউজ বিভাগ কাজ করেছে, অনুষ্ঠান বিভাগও; কীভাবে আপনারা একটা পরিবার নিয়ে সুন্দর অনুষ্ঠান ঘরে বসে টেলিভিশনে দেখতে পারেন সে জন্য ব্যবস্থা করেছেন। আমাদের অনলাইন বিভিন্ন সময়ে চিন্তা করেছে, যখন আপনারা সময় পাবেন যেন আপনাদের প্রিয় চ্যানেল অনুষ্ঠানগুলো, খবরগুলো আবারও দেখতে পারেন বা কোনও কাজের ফাঁকে যদি মিস করে থাকেন আপনারা যেন অনলাইনের মাধ্যমে সেটা দেখতে পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা করেছে।’

বিভিন্ন প্রোগ্রামের কথা উল্লেখ করে আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেন, ‘আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন আপনাদের এই চ্যানেল দীর্ঘ চলার পথে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করেছে। বিশেষ করে আমরা যদি দু-একটির কথা উল্লেখ করি, আপনাদের সবকিছুই মনে আছে; আপনাদের সহযোগিতার কারণেই সফল হয়েছে এই অনুষ্ঠান। বিশেষ করে আপনারা জানেন ক্লোজআপ ওয়ান বাংলাদেশ, যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা দেশ-বিদেশে যেখানেই আছে সবার প্রিয় হয়েছে। আমাদের পিএইচপি কুরআনের আলো, আপনারা জানেন আমাদের হাফেজদের একটি প্রতিযোগিতা হয়, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যাঁরা আমাদের এখানে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়েছেন, তাঁরা শুধু বাংলাদেশে নয় বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বে বিভিন্ন জায়গায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। সারা বিশ্বে প্রথম স্থান, দ্বিতীয় স্থান, তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। এটা আপনাদের গর্ব, আমাদের গর্ব। আপনারা জানেন যখন শিল্পী সংকট হয়েছিল, চলচ্চিত্র শিল্পী, তখনও এফডিসিকে সাথে নিয়ে এনটিভি শিল্পী সংগ্রহে কাজ করেছে। এখন অনেক চ্যানেল হয়েছে, আমাদের কর্মী সংকট থাকে, সেদিকে লক্ষ রেখেও আমরা উপস্থাপক, উপস্থাপিকা তৈরি করেছি, ট্রেনিং করেছি। এ ছাড়া বাচ্চাদের জন্য টিফিনের ফাঁকে, মার্কস অলরাউন্ডার অনুষ্ঠান করেছি। আপনাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য হা-শো অনুষ্ঠান করেছি। রান্নার অনুষ্ঠান করেছি। আমাদের সবাই যেন সুন্দর রান্নার অনুষ্ঠান, আপনারা জানেন রান্না একটি শিল্প, এটাকে ভালোমতো বুঝতে পারে, ভালো শিক্ষা নিতে পারে, সেজন্য সুপার শেফ আমরা করেছি। এ ছাড়া অনেক অনুষ্ঠান আমরা আপনাদের সাথে নিয়ে করেছি। সবকিছুই সফল হয়েছে আপনাদের সহযোগিতা, পরামর্শের কারণে। ভবিষ্যতেও আমাদের সুন্দর সুন্দর পরিকল্পনা আছে। আপনারা টেলিভিশনের পর্দায় আপনাদের প্রিয় চ্যানেলে সেগুলো দেখতে পারবেন।’

চলমান বন্যা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেন, ‘আপনাদের প্রিয় চ্যানেল এনটিভি দেশের সকল দুর্যোগে আপনাদের সাথে নিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। আইলাতে বা শীতে যখন শীতবস্ত্রের প্রয়োজন হয়েছে তখন এবং যখনই যেখানে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস—সব জায়গায় এনটিভি আপনাদের সাথে ছিল। আজকেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গা প্লাবিত হচ্ছে, আপনারা দেখেছেন আপনাদের প্রিয় চ্যানেল যতটুকু সম্ভব সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। আমরা আশা করব, দেশবাসী সবাই সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে, আমরা সরকারের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করব। এই দুর্যোগে আমাদের একজন ভাইবোনও যেন কষ্ট না পায়, না খেয়ে না থাকে, কোনও অসুবিধায় না পড়ে। আমাদের সবারই উচিত এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি, সকল দুর্যোগেই ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণ উতরাতে পারবে। আমরা আপনাদের কাছে আবারও আবেদন করব আপনারা যেভাবে অতীতে আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন... আপনারা জানেন আমরাই একমাত্র চ্যানেল যারা দর্শকদের বিভিন্ন গল্প নিয়ে দর্শকদের গল্প নামে নাটক করেছি। তাই আমরা মনে করি আপনারা যদি আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেন, পরামর্শ দেন; কী ধরনের নিউজ, প্রোগ্রাম, টক শো দেখতে চান আমাদের নিউজের মাধ্যমে, প্রোগ্রামের মাধ্যমে, অনলাইনের মাধ্যমে; আমাদের এনটিভির কর্মকর্তারা, কর্মচারীরা আপনাদের জন্য সেভাবে প্রস্তুত করবে।’

আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদের একঝাঁক কর্মী আছে; শুরু থেকে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। আজকে আমাদের সাথে কিছু নতুন মানুষও জয়েন করেছেন, কিন্তু বেশির ভাগই শুরু থেকে; ২০০৩ সালের ৩ জুলাই থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত যে এনটিভি চলছে, তখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকেই হয়তো আমাদের এখান থেকে গিয়ে অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেলেও কাজ করছে। তাঁরাও আমাদের এনটিভি পরিবারেরই সদস্য। এখনও আমরা মনে করি আমাদের বিভিন্ন কাজে তাঁদের আমরা পাশে পাই। আমরা আশা করব, আগামী দিনগুলাতে সকল অবস্থায় আমরা সহযোগিতা পাব। বিশেষ করে বিজ্ঞাপনদাতা, কেবল অপারেটর যাঁরা আছেন, যাঁরা সব সময়েই আপনাদের এ চ্যানেলকে মূল্যায়ন করেছেন, সহযোগিতা করেছেন; আমি আবারও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আশা করছি আগামী দিনগুলোতেও এনটিভির সাথে আপনারা থাকবেন, আমরা আপনাদের সাথে থাকব।’

ডিজিটাল দুনিয়ায় এনটিভি

প্রযুক্তির বিস্ময়ের সঙ্গে দর্শককে পরিচয় করিয়ে দিতে খুব একটা সময় নেয়নি এনটিভি। তাই তো ডিজিটাল দুনিয়ায় শক্ত অবস্থানে রয়েছে এনটিভি। টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে এনটিভি ডিজিটাল এখন শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে। আর এ অর্জন মাত্র সাত বছরে।

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি চালু হয় এনটিভির অনলাইন বিভাগ। যখনকার খবর তখনই দেখা যায় এনটিভির অফিশিয়াল নিউজ পোর্টাল এনটিভিবিডি ডটকম-এ। পাশাপাশি এনটিভিতে সম্প্রচারিত সব খবর ও অনুষ্ঠানের ভিডিও এবং দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব ছবি পাওয়া যায় এই ওয়েবসাইটে (www.ntvbd.com)। এর নেপথ্যে রয়েছে সুচিন্তিত-সুপরিকল্পিত পরিচালনা ও দক্ষ কর্মীদের নিরলস পরিশ্রম।

পৃথিবীর ১৯৩টি দেশ থেকে ৫০ লাখেরও বেশি ভিজিটর প্রতি মাসে এনটিভি অনলাইন ভিজিট করে। ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এনটিভি ডিজিটাল। এ ছাড়া গুগল অ্যাড ম্যানেজার, অ্যাডসেন্স, অ্যাডেক্স, টাবুলাসহ দেশি-বিদেশি অ্যাড নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত রয়েছে এনটিভি ডিজিটাল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কোটি ৪৬ লাখ লাইক ও এক কোটি ৮১ লাখের বেশি ফলোয়ার নিয়ে দেশের টেলিভিশনগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে এনটিভি। লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার মিলিয়ে এনগেজমেন্টও হয় প্রচুর। এ ছাড়া টুইটার, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, লাইকি এবং পিন্টারেস্টেও রয়েছে এনটিভি অনলাইনের জোরালো উপস্থিতি।

ইউটিউবে ভিডিও দিয়ে বিশ্বের দর্শককে মাতিয়ে রেখেছে এনটিভি অনলাইন। ২০১৪ সালেই ইউটিউবের প্রিমিয়াম পার্টনারের স্বীকৃতি পায় এনটিভি। লাইভ টিভি, খবর, নাটক, সিনেমা, গান, রান্না, ইসলামিক অনুষ্ঠান, লাইফস্টাইল, ভ্রমণসহ এনটিভির সিএমএইচ-এ রয়েছে ২১টি চ্যানেল। সম্প্রতি ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ভিউয়ের মাইলফলক অতিক্রম করেছে এনটিভি, যা দেশের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে একটি রেকর্ড। এনটিভির রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার, যা টিভি ইন্ড্রাস্ট্রির শীর্ষে। শুধু তা-ই নয়, ২০টি ইউটিউবের সিলভার ও গোল্ড প্লেবাটন পেয়েছে একমাত্র এনটিভি।

নিত্যনতুন প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছে এনটিভি অনলাইন। দর্শক, শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এনটিভি এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে—বর্ষপূর্তির শুভক্ষণে এমনই প্রত্যাশা।