৫ বছরের সন্তানকে আছাড় মেরে হত্যার অভিযোগে বাবা গ্রেপ্তার

Looks like you've blocked notifications!
সন্তানকে আছাড় মেরে হত্যার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার সাইফুল। ছবি : এনটিভি

গোপালগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে জুনায়েদ সিদ্দিকী (৫) নামের এক শিশুকে আছাড় মেরে হত্যার অভিযোগে শিশুটির বাবা মো. সাইফুল ইসলামকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার (১ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা সদরের ঘোষেরচর কলাবাগানে ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আজ বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকালে শিশু জুনায়েদের মা কামরুন নাহার বেগম বাদী হয়ে স্বামী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। পরে আসামি সাইফুলকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সাইফুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুকতাইল গ্রামের উত্তরপাড়ায়। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী কামরুন নাহার ও ছেলে জুনায়েদকে নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের ঘোষেরচর গ্রামের কলাবাগান এলাকার মাসুদ মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান গ্রামের বাড়ি শুকতাইল থাকেন। রিকশা চালিয়ে ও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন সাইফুল। প্রায়ই নেশাগ্রস্ত থাকায় ঠিকমতো সংসারের খরচ দিতেন না। স্ত্রী কামরুন নাহার বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে সংসারের খরচ যোগাতেন। 

কামরুন নাহার অভিযোগ করে বলেন, ‘গত রোববার দুপুরে আমরা তিনজন খাটে শুয়ে ছিলাম। আমার স্বামী মোবাইলে গেম খেলছিলেন। কথার মধ্যে হঠাৎ ছেলেকে সাপ ও আমাকে নাগিনী বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে আমাকে ও ছেলেকে মারধর করেন। ভয়ে আমি ছেলেকে বলি বাড়ির মালিক মাসুদ মিয়াকে ডাকতে। ছেলে দরজা খুলতে ব্যর্থ হয়। আমি দরজা খুলতে গেলে ছেলেকে পেছন থেকে ধরে ওপরে তুলে আছাড় দেন স্বামী।’

কামরুন নাহার বলেন, ‘ছেলেকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার পর রক্তবমি শুরু হয়। নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। জুনায়েদ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সন্ধ্যার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন। রাত ১০ টার দিকে ছেলেকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি।’

কামরুন নাহার আরও বলেন, ‘স্বামী সাইফুল সঙ্গে থাকায় হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে জুনায়েদ এক্সিডেন্ট করেছে বলে জানাই। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছেলে চিকিসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মারা যাবার পর ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের কাছে বিষয়টি খুলে বলি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ সদস্যরা আমার স্বামীকে আটক করে ক্যাম্পে রাখে। আজ এ বিষয়ে মামলা করেছি।’

স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে কি আর নিজের সন্তানকে মেরে ফেলি নাকি উল্লেখ করে অভিযুক্ত সাইফুল বলেন, ‘পরপর তিন রাত ঘুমাতে পারিনি। তাই সেদিন কি ঘটেছে মনে নেই।’

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদ বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। আসামি সাইফুল ইসলামকে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে আনা হয়েছে। আজ বুধবার গোপালগঞ্জের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।’