ভূমিকম্পে ফাটল, বেরিয়ে এলো পানি বালু

Looks like you've blocked notifications!

ভূমিকম্পে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে জমি ফেটে ভূগর্ভের পানি ও বালু বের হয়ে এসেছে। ভূমিকম্পের আতঙ্কে তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে ও ইটের আঘাতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।

ভূমিকম্পের সময় জেলা শহরের পশ্চিমবাজার এলাকায় সৈয়দ কুদরত উল্লাহ সড়কে বাংলালিক টাওয়ারের সুইচরুমে আগুন ধরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। শহরের বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রেকে (থারিয়া) রাখা মালামাল ভূমিকম্পের সময় নিচে পড়ে  যায়। ঘরবাড়ি থেকে বের হয়ে লোকজনকে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। এ সময় জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলা। এখানে রাস্তা ও ফসলের মাঠ ফেটে পানি ও বালু বের হয়ে এসেছে।  উপজেলার ভানুগাছ, নছরতপুর, পশ্চিম বালিগাঁও, শিমুলতলা, হীরামতি, রায়নগর, মাধবপুর, কুমড়াকাপন, চৈতন্যগঞ্জ, নারাইনপুর, চিৎলিয়া, রানীরবাজার, জালালপুর, রামপুর, কান্দিগাঁও, পতনঊষার, আদমপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসাবাড়ির ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে ভয় ও আতঙ্কে সময় কাটছে এসব এলাকার নাগরিকদের।

আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে যখন ভূমিকম্প শুরু হয় তখন আতঙ্কে লোকজন চিৎকার করে ঘরবাড়ি থেকে বাইরে বের হয়ে আসে।

কমলগঞ্জ পৌর এলাকায় মুহিবুর রহমানের জমির বিশাল এলাকা জুড়ে ফাটল দেখা দিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু ও পানি বের হয়। কান্দিগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনের বাড়ির ভবনে ফাটল ও রান্নাঘরের ক্ষতি হয়েছে। ভানুগাছ বাজারের গাউছিয়া আরমান হার্ডওয়ার দোকানে ভূমিকম্পে গ্লাস ভেঙে  লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া বাজারের ১৫-২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভানুগাছ পৌর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সানোয়ার হোসেন।

ভূমিকম্পে হেরেংগা বাজারের পশ্চিমে বনগাঁও রাস্তায় ধলাই নদীর পাড়ে, পৌর এলাকার কুমড়াকাপন গ্রামের রাস্তা, রানীরবাজার এলাকার একটি রাস্তাসহ বিভিন্ন বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

ভূমিকম্পে কমলগঞ্জ পৌরসভার ভবন ও  জেলা পরিষদের ৫০০ আসন বিশিষ্ট নবনির্মিত অডিটরিয়াম কাম মাল্টি পারপাস ভবনের অসংখ্য স্থানে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। অডিটরিয়ামের সামনের দিকের উপরিভাগের দেয়ালের ইট খসে পড়েছে। এ ছাড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক ভবনের দেয়াল, ছাদ ও প্রাচীর ফেটে গেছে। অসংখ্য মাটির দেয়াল ভেঙে গেছে। দেয়াল ভেঙে ইটের আঘাতে ও বৈদ্যুতিক তারের কারণে অনেকেই আহত হয়েছে।

বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে উপরে পড়ে শমশেরনগর ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামের মরিয়ম বেগম, দেয়ালের ইটের আঘাতে আমিন মিয়া ও তাঁর স্ত্রী আহত হয়েছেন। আধাপাকা ঘরের দেয়াল ভেঙে উজ্জ্বল সিংহ, মৌলভীবাজার পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র রেদওয়ান, জেলা শহরের সিলেট সড়কের একটি ভবন থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে আহত হন শামিম নামের একজন।

আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যান। গুরুতর আহত চারজনকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভূমিকম্পের খবর পেয়ে কমলগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটারের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসা এলাকা।

কমলগঞ্জের ইউএনও মোহাম্মদ মাহমুদুল হক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, ভূমিকম্পের পুরো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে অসংখ্য বাড়িঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। জমি ফেটে পানি ও বালু বের হয়ে গেছে।