পায়ুপথে ৬০ লাখ টাকার সোনা!

Looks like you've blocked notifications!
পায়ুপথ থেকে বের করা বারোশ গ্রাম সোনা। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আবারও অভিনব পদ্ধতিতে লুকিয়ে রাখা স্বর্ণের সন্ধান মিলল! বাংলাদেশ শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, রাতভর নাটকীয়তার পর ভোরে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১২টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়।

বাংলাদেশ শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল ইসলাম খান এনটিভি অনলাইনকে জানান, অভিনব উপায়ে পাচারের চেষ্টাকালে এক কেজি ২০০ গ্রামের মোট ১২টি স্বর্ণের বারসহ এক যাত্রীকে আটক করে বিমানবন্দরের শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ।

বৃহস্পতিবার ভোরে ওই যাত্রীকে আটকের পর তাঁর পায়ুপথ থেকে প্রতিটি ১০০ গ্রাম ওজনের ১২টি স্বর্ণের বারগুলো উদ্ধার করা হয়। আটক স্বর্ণের মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর তাদের ফেসবুক পেজের তথ্য অনুযায়ী, শরীফ আহমেদ নামের এই স্বর্ণ পাচারকারীর বাড়ি কুমিল্লার ময়নামতিতে। তিনি মালিন্দ এয়ারলাইন্সের বিমানে চড়ে মালয়েশিয়া থেকে এসেছিলেন।

শুল্ক গোয়েন্দা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই যাত্রীকে নজরদারিতে রাখে। কাস্টমস হলের গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করে চলে যাওয়ার সময় তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর হাঁটাচলায় অস্বাভাবিকতা থাকায় শুল্ক গোয়েন্দার সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই স্বর্ণ থাকার কথা স্বীকার করছিলেন না।

ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদেও তাঁর কাছে স্বর্ণবার থাকার কথা অস্বীকার করতে থাকেন। অবশেষে শুল্ক গোয়েন্দার দল রাত ৩টায় উত্তরা উইমেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যান। সেখানে ওই যাত্রীর পেটে এক্স-রে করানো হয়।

এক্স-রেতে শরীফ আহমেদের মলাশয়ে (রেক্টাম) তিনটি অস্বাভাবিক পোঁটলার অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যাতে স্বর্ণের অস্তিত্ব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।

কিন্তু এক্স-রে রিপোর্ট দেখানোর পরও শরীফ আহমেদ স্বর্ণের কথা স্বীকার করেননি; বরং তাঁর আত্মীয় ‘বড় কর্মকর্তা’ বলে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের 'দেখে নেবেন’ বলে সতর্ক করেন।

এরপর শুল্ক গোয়েন্দাদের উদ্যোগে কর্তব্যরত চিকিৎসক পেট কেটে স্বর্ণ বের করার কথা বলে তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নিলে তিনি নমনীয় হন। অপারেশন ছাড়া স্বর্ণ বের করে দেবেন বলে ওয়াদা করেন।

এরপর চলে স্বর্ণ বের করার পালা। যাত্রীকে শাহজালালের কাস্টমস হলে নিয়ে এসে পানি খেতে দেওয়া হয়। পরে টয়লেটে নিয়ে তলপেটে চাপ প্রয়োগ করা হয় দীর্ঘক্ষণ। কোনো কিছুতে কাজ না হলে তাঁকেই বলা হয় স্বর্ণ বের করে দিতে। দেওয়া হয় লুঙ্গি। লুঙ্গি পরে শুল্ক গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে টয়লেটের অভ্যন্তরে বিশেষ কায়দায় পায়ুপথ থেকে একে একে তিনটি কনডম বের করে আনেন ৩৩ বছরের যাত্রী শরীফ আহমেদ। বের করা তিনটি কনডমের ভেতর থেকে চারটি করে মোট ১২টি স্বর্ণবার পাওয়া যায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, যাত্রী চারটি গোল্ডবার স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে একটি কনডমে রেখে তা আবার স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রেক্টামে প্রবেশ করান। এ রকম তিনটি কনডম প্রবেশ করান তিনি। ফ্লাইট অবতরণ করার ৩০ মিনিট আগে আকাশপথে বাথরুমে গিয়ে যাত্রী কনডমগুলো পায়ুপথে প্রবেশ করান। এ জন্য মালয়েশিয়ায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন তিনি।

শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারির হাত থেকে বাঁচার জন্য এই অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেন বলে তিনি জানান। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও টাকার জন্য এই পন্থা অবলম্বন বলেও জানান তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানান, তিনি একজন মুদি দোকানি। ৩ জানুয়ারি ব্যবসার কাজে তিনি মালয়েশিয়া যান। এ ছাড়া ২০১৬ সালে তিনি ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করেন।

এদিকে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া এনটিভি অনলাইনকে জানান, এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে।