ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা, আ. লীগ কার্যালয় ভাঙচুর

Looks like you've blocked notifications!
রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ বুধবার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে টেবিল-চেয়ার ও নেতানেত্রীদের ছবি ভাঙচুর করা হয়। ছবি : এনটিভি

রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়েছে। এ সময় কার্যালয়ের টেবিল-চেয়ার ও নেতানেত্রীদের ছবি ভাঙচুরের পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষকে ধাওয়া করে। বিক্ষুব্ধরা প্রায় ঘণ্টাখানেক রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখে। আজ বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বর্তমান কমিটির সভাপতিকে অপসারণের দাবিও জানায়।

জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) চিত্তরঞ্জন পাল এনটিভি অনলাইনকে জানান, ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার পর পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে পাঠানো জেলা ছাত্রলীগের কমিটির ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বর। এতে আবদুর জব্বার সুজনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রকাশ চাকমার নাম ঘোষণা করা হয়। সুজন এর আগে রাঙামাটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রকাশ জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির উপছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

কমিটিতে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাইফুল আলম রাশেদ, সহসভাপতি এম এন কাউসার রুমি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন টিপু ও জাতীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে শাহনেওয়াজ টিপুর নাম ঘোষণা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কমিটি ঘোষণার পরপরই বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগকর্মীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। এ সময় সভাপতি সুজনের পক্ষের সমর্থকদের ধাওয়ায় বিক্ষুব্ধরা পিছু হটে। পরে তারা রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখে।

বিকেলে তবলছড়িতে একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি পদপ্রত্যাশী পাঁচ নেতা। এঁরা হলেন সাইফুল আলম রাশেদ, এম এন কাউসার রুমি, জয়প্রকাশ দত্ত, মঈনুদ্দিন বাপ্পী ও শাহনেওয়াজ। তাঁরা অভিযোগ করেন, সুজন অছাত্র এবং ২০১২ সালে রাঙামাটিতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার উসকানিদাতা। পেশাদার ব্যবসায়ী সুজনের বিরুদ্ধে নারীঘটিত কেলেঙ্কারি রয়েছে। তাঁকে সভাপতি করায় অসাম্প্রদায়িক ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হলো। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, প্রার্থী না হয়ে এবং জীবনবৃত্তান্ত (বায়োডাটা) জমা না দিয়ে সুজন কীভাবে জেলা কমিটির সভাপতি হন? অবিলম্বে সুজনকে অপসারণ করে নতুন যে কাউকে সভাপতি ঘোষণার দাবি জানান পাঁচ ছাত্রনেতা।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেন, জেলা যুবলীগ সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ছাওয়াল উদ্দিন ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুরের ব্যাপারে ওই পাঁচ ছাত্রনেতা দাবি করেন, ইকবাল, সাইফুল ও বাপ্পার নেতৃত্বে সশস্ত্র যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে তাঁদের ওপর হামলা ও পরবর্তী সময়ে ভাঙচুর চালায়। অনভিপ্রেত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই এবং তাঁদের বিপদে ফেলতেই এ ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ভাঙচুরকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। এ সময় সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী এনটিভিকে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি যে কমিটি ঘোষণা করেছে, সেটাই সবাইকে মেনে নিতে হবে। কারো যদি ভিন্নমত থাকে, সে গণতান্ত্রিক পন্থায় প্রতিবাদ জানাতে পারত। কিন্তু তা না করে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের ঘটনা দুঃখজনক। এদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে আবদুল জব্বার সুজনের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

গত মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে ছাত্রলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শ নিয়ে ঢাকা থেকেই কমিটি ঘোষণা করা হবে জানিয়ে রাঙামাটি ত্যাগ করেন।