বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
সরকার সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকে সরে না এলে আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে সাংবাদিকদের এই হুঁশিয়ারির কথা জানান আনু মুহাম্মদ।
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বলেন, কিছু ব্যক্তি মুনাফার জন্য দেশ ও জনগণের ক্ষতি জেনেও সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কাজ চালিয়ে যাবে। সেটা মেনে নেওয়া যায় না।
দুই মাস আগের ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে জাতীয় কমিটির ডাকা হরতাল কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে রাজধানীর ১০টি পয়েন্টে হরতাল সমর্থকরা অবস্থান নেয়। আধা বেলা হরতাল চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় হরতাল শুরুর মুহূর্তে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় হরতাল সমর্থকদের। এতে পাঁচজন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
তবে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, পল্টন, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা, লালবাগ, তেজগাঁও ও আজিমপুর এলাকায় হরতাল সমর্থনে মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে।
সকাল থেকে রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকার বিভিন্ন সড়কে হরতাল সমর্থকরা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুড়ে বেড়ায়। পল্টন মোড়ে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাধ্য হয়ে হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সরকার যদি জনগণের কথা ভেবে আমাদের যুক্তিতর্ক বোঝার চেষ্টা করত, তাহলে হরতাল দেওয়া দরকার হতো না।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার যদি সংবিধানশীল হতো, তাহলে এ ধরনের কর্মসূচি আসত না। সরকারকে সাত বছর ধরে রামপাল প্রকল্প বন্ধের আহ্ববান জানানো হয়েছে।
হরতালের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার ভয়ভীতি দেখানোর জন্য সকালে শাহবাগে দফায় দফায় পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়েছে। টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে হরতাল সমর্থকদের ওপর।
বৈজ্ঞানিক তথ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলে বাংলাদেশের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলে সরকার জনগণের দাবি মেনে নিত।
আনু মুহাম্মদের দাবি, সুন্দরবন রক্ষার হরতাল বন্ধ করতে সরকার বাসমালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করছে। তার পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখানোর জন্য শাহবাগে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে।
হরতালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শিবলী নোমান বলেন, গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শাহবাগে হামলার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে।
ফেব্রুয়ারিতেই রামপাল প্রকল্পের অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার কথা। সুন্দরবনের কাছে হওয়ার কারণ দেখিয়ে শুরু থেকেই এ কেন্দ্রটির বিরোধিতা করছে বামপন্থী কয়েকটি সংগঠন।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ইউনেস্কোঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে প্রথম থেকে এর বিরোধিতা করে আসছেন পরিবেশবাদীরা। তবে সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী এর আগেও বিভিন্ন বক্তব্যে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলেছেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।
শুরু থেকেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনে রয়েছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে ২৬ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরীতে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি। এই হরতালে বিএনপির সমর্থনের কথা জানান দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।