সাঁওতালপল্লীতে আগুন : গাইবান্ধার এসপিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

Looks like you've blocked notifications!

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লীতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আশরাফুল ইসলাম ও গোবিন্দগঞ্জের চামগাড়িতে ওই দিন দায়িত্বরত ওই থানার সব পুলিশকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের কিছু সদস্য সরাসরি জড়িত উল্লেখ করে হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। 

গত ৩১ জানুয়ারি গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. শহীদুল্লাহ ৬৫ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে  উপস্থাপন করেন। 

আজ মঙ্গলবার এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। তিনি জানান, গত ৩১ জানুয়ারি আদালতে উপস্থাপনের পর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি শেষে ৭ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। আজ আদালত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার ও গোবিন্দগঞ্জ থানার সব পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেদনে কতিপয় পুলিশ সদস্য এ আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তাঁদের নাম সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দূর থেকে ভিডিও ক্লিপ দেখে পুলিশদের শনাক্ত করা গেলেও তাঁদের নাম জানা যায়নি। ওই পুলিশদের শনাক্তের বিষয়ে ৭ তারিখ আদালত কী আদেশ দেন, সেটাই দেখার বিষয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছ থেকে প্রতিবেদনের কিছু অংশ জানা গেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, টেলিভিশনে প্রদর্শিত ভিডিও ক্লিপ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, কিছু পুলিশ সদস্য এবং দুজন সিভিল পোশাকধারী ব্যক্তি সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন লাগানোয় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। আরো কিছু পুলিশ সদস্য কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যাঁরা আগুন লাগানোয় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেননি। তবে তাঁরা আগুন নেভানোর চেষ্টাও করেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চামগাড়ি বিল ও কুয়ারমারা এলাকায় আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে। সাহেবগঞ্জ ও হরিণমারী এলাকায় আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার পরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এবং হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখে বসতি স্থাপনকারীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আগুন লাগানোর আগেই নির্মিত স্থাপনা থেকে আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ গজ দূরে মাদরপুর ও জয়পুর গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল মর্মে সাক্ষীদের বক্তব্যে সুস্পষ্ট হয়েছে। ফলে এরূপ প্রেক্ষাপটে সাক্ষীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িত স্থানীয় অপরাধীদের সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে পারেননি। তা ছাড়া কোনো কোনো সাক্ষী তাঁদের জবানবন্দিতে আগুন লাগানোর ঘটনায় বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করলেও তাঁদের উপস্থিতির বিষয়টি বর্ণিত প্রেক্ষাপটে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পোশাক পরিহিত থাকায় সাঁওতালদের স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের গুলির আওয়াজে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সাঁওতালরা তাদের স্থাপনা ছেড়ে চলে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে গ্রুপটি খামারের ভেতরে প্রবেশ করেছিল, তারাই চামগাড়ী বিল নামক এলাকায় সাঁওতালদের নির্মিত স্থাপনার কাছে গেছে।

পেনড্রাইভে প্রদত্ত ভিডিও ক্লিপ পর্যবেক্ষণে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল ও অন্য সাক্ষীদের পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, চামগাড়ী বিল এলাকায় নির্মিত স্থাপনা থেকে সাঁওতালরা চলে যাওয়ার পর আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও ডিবির পোশাক পরিহিত সদস্য এবং সাধারণ পোশাকধারী দুজন ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। ওই গ্রুপটির মধ্য থেকে পুলিশ লেখা পোশাকধারী দুজন, ডিবি লেখা পোশাকধারী একজন ও সাধারণ পোশাকধারী দুজন (লাল ও সাদা রঙের শার্ট পরিহিত) ব্যক্তিকে সক্রিয়ভাবে চামগাড়ী বিল এলাকায় সাঁওতালদের স্থাপনায় আগুন লাগাতে দেখা গেছে। অপরদিকে কুয়ামারা, সাহেবগঞ্জ ও হরিণমারী এলাকায় সাঁওতালদের নির্মিত স্থাপনায় কতিপয় স্থানীয় জনতা আগুন লাগিয়েছে।

এর আগে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লীতে অগ্নিসংযোগে পুলিশ জড়িত কি না, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

ওই নির্দেশ মোতাবেক গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিম ঘটনার তদন্ত করে আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন।