যেভাবে গ্রেপ্তার ব্লগার রাজীবের খুনি রানা
ব্লগার রাজীব হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ ও ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রানা হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার এড়াতে মালয়েশিয়া পালিয়ে গিয়েছিলেন। দেশে ফেরার পর পরই আজ সোমবার পুলিশ উত্তরা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের দাবি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র রানা মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী তথাকথিত ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। দেশে থাকতেও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সমন্বয় করতেন তিনি।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ চলাকালে বাসায় ফেরার পথে রাজধানীর পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে আততায়ীর হাতে নিহত হন রাজীব হায়দার শোভন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডা. নাজিম উদ্দীন পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এতে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দুজন হলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দিপু (২২) ও রেদোয়ানুল আজাদ রানা (৩০)। যাবজ্জীবন দণ্ড পান মাকসুদুল হাসান অনিক (২৬)। রানা এতদিন পলাতক ছিলেন।
দুপুরে রানাকে গ্রেপ্তারের পর বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সনাশন্যাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যার পর ২০১৪ সালের প্রথম দিকে মালয়েশিয়া পালিয়ে গিয়েছিলেন রেদোয়ানুল আজাদ রানা। যদিও পুলিশ তাঁর পাসপোর্ট নম্বর ধরে বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করেছিল, যাতে তিনি দেশের বাইরে যেতে না পারেন। কিন্তু রানা মূল পাসপোর্টে দেওয়া ঠিকানার পরিবর্তে অন্য ঠিকানা ব্যবহার করে বিকল্প আরেকটি পাসপোর্ট তৈরি করেছিলেন। এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে স্টুডেন্ট ভিসায় তিনি মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান।
‘মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর রানা আইএসের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাই তিনি সিরিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাতে ব্যর্থ হন।’
রানা পালিয়ে গিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন এই তথ্য পুলিশের কাছে ছিল। পুলিশ মালয়েশিয়া গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তাঁর ব্যাপারে সহযোগিতা চায়। গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘ নজরদারির পর সম্প্রতি রানাকে গ্রেপ্তার বরে। তারপরই তাঁকে দেশে পাঠায় বলে জানান মনিরুল ইসলাম।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান জানান, দুপুরে রানা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। কিন্তু তাঁকে সেখানেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। নজরদারিতে রাখা হয়। পরে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর সঙ্গে আশরাফ নামে এক সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
মনিরুল ইসলাম আরো জানান, রানার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার তাঁকে বিশেষ আদালতে তোলা হবে এবং ১০ দিনের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে।
বিদেশে পালানোর জন্য রানা যে বিকল্প পাসপোর্ট করেছিল তাতে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা জড়িত বা তাদের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তাও যাচাই করা হবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।