মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান

বরিশালের চরমোনাইয়ের বার্ষিক মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে আজ শনিবার দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা ওলামা-মাশায়েখদের উপস্থিতিতে বিশাল ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বেলা ১১টায় এই সম্মেলনে সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিরা যোগ দেন। এ সময় চারটি বিশাল মাঠের লাখ লাখ মানুষের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।
চরমোনাইয়ের মিডিয়া সমন্বয়ক কে এম আতিকুর রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চরমোনাইয়ের পীরসাহেবের আমন্ত্রণে মাহফিলে যোগ দিতে আজ সকালে হেলিকপ্টারে করে সৌদি রাজকীয় সরকারের একটি প্রতিনিধিদল চরমোনাইতে আসেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন সৌদি আরবের ধর্মমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ইবরাহীম ইবনে আবদুল আজিজ আয যায়েদ, সৌদি সরকারের সর্বোচ্চ ওলামা কাউন্সিলের সদস্য ও মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাদ বিন তুর্কি ইবন মুহাম্মাদ আল খাচলান, রিয়াদ জামিউল ইখলাসের সম্মানিত ইমাম ও খতিব মুহাম্মদ সালেহ মুহাম্মাদ আস সামেরি, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ জাইফুল্লাহ আল মাতিরী, সালেম সাইদ ইবনে সালেহ আবদুল আজিজসহ সৌদি রাষ্ট্রদূত ও অন্য কর্মকর্তারা।
বেলা ১২টায় চরমোনাই ময়দানে এলে চরমোনাইয়ের পীরসাহেব মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীম, নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম ও আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মো. মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী তাঁদের স্বাগত জানিয়ে লালগালিচা সংবর্ধনা দেন। পরে তাঁরা জামিয়ার কার্যালয়, কোরআন শিক্ষা বোর্ড অফিস ও মাহফিলের প্যান্ডেলসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইবরাহীম ইবনে আবদুল আজিজ আয যায়েদ জানান, তিনি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের পক্ষ থেকে এসেছেন। তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, চরমোনাইয়ের পুরো ময়দানজুড়ে যেন নূর চমকাচ্ছে। তিনি ইমানি এই দলের সঙ্গে থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। এখানে আসতে পেরে তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এবং বলেন, ‘আমাদের নীতি হলো বিশ্ব মুসলিমের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি পীরসাহেবের পরিবারকে পবিত্র পরিবার উল্লেখ করে তাঁকে মাহফিলে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আয়োজক এবং আসার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
সাদ বিন তুর্কি ইবন মুহাম্মাদ আল খাচলান তাঁর বক্তব্যে বলেন, পঙ্গপালের মতো অসংখ্য মানুষ দুনিয়ার কোনো উদ্দেশ্যে নয়, শুধু আল্লাহকে পাওয়ার জন্য এখানে ছুটে এসেছেন। তিনি সব মুমিনকে একটি দেহের মতো উল্লেখ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি ইমান, নামাজ, ইলম ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় জোর দেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির পীরসাহেব চরমোনাইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে বিশ্ববরেণ্য ওলামা-মাশায়েখসহ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম বক্তব্য দেন। বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপিঠ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিমের প্রতিনিধি হিসেবে আসেন নায়েবে মুহতামিম আবদুল খালেক সাম্বলী, শায়খে সানী আল্লামা কমর উদ্দিন, নাজেমে তালিমাত আল্লামা ইউসুফ তাওলুভি, সাবেক নাজেমে তালিমাত আল্লামা মুজিবুল্লাহ।
মক্কা শরিফের বাসিন্দা বিশ্ববরেণ্য মাশায়েখ আল্লামা আবদুল হাফিজ মক্কী (রহ.)-এর দুই ছেলেসহ সাতজন সন্তান উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে এক ছেলে তাঁর বক্তব্যে তাঁদের মরহুম বাবার জন্য দোয়া কামনা করেন। মরহুম আবদুল হাফিজ মক্কী গত বছর মাহফিলে এসে বক্তব্য রেখেছিলেন।
মাহফিলে আরো বক্তব্য দেন ওমানের মাসকাট উলুমে শরইয়্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার খালিদ ইবনে মুহাম্মাদ সালেম আবদালি। তিনি বলেন, যারা কোরআনের বিরোধিতা করবে তারা ধ্বংস হবে। মুসলমানদের কোরআন প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
দেওবন্দের আল্লামা আবদুল খালেক সাম্বলী বলেন, যুগে যুগে কাদিয়ানিসহ বাতিলগোষ্ঠী চেষ্টা করেছে মানুষকে আলেমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে, কিন্তু তারা সক্ষম হয়নি। তাই আলেমদের সতর্ক থেকে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
বক্তারা চরমোনাইকে বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের সহিহ দাওয়াতি মারকাজ হিসেবে অভিহিত করেন।
বিদায়ের আগে সৌদি মেহমান ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ সৌদি বাদশাহর পাঠানো নানা ধরনের সম্মানজনক উপহারসামগ্রী পীরসাহেব মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীসহ পরিবারের সব সদস্যের হাতে তুলে দেন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার জামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা আবদুল হক আজাদ, অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, হাফেজ মাওলানা এ টি এম হেমায়েত উদ্দিন, তেজগাঁও মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ড. মাওলানা মুশতাক আহমাদ, বরিশাল মাহমুদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগের শায়খুল হাদিস মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মুফতী হেমায়েতুল্লাহ, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, জামিয়া মুহাম্মাদিয়া মোহাম্মদপুরের অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, দারুল উলুম মিরপুর ১৩-এর মুহতামিম মুফতি রেজাউল হক আবদুল্লাহ, মাদানীনগর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুফতি বশিরুল্লাহ, মাওলানা আবদুস সাত্তার (পীরসাহেব, গালুয়া), মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান ওয়ালিউল্লাহ (পীরসাহেব, বরগুনা)।
সঞ্চালনায় ছিলেন মাওলানা আহমাদ আবদুল কাইয়ুম, মাওলানা নেছার উদ্দিন ও মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী।
বিকেল ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় ওলামাসহ দেশি বিদেশি ওলামায়ে কেরাম বয়ান পেশ করেন।
মাহফিলের নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামীকাল রোববার বেলা ১১টায় ছাত্রদের উদ্যোগে ছাত্র-গণজমায়েত ও ২৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল ৮টায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এ মাহফিলের সমাপ্তি ঘটবে।