স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর বিদ্যুতে আলোকিত থানচি
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর বিদ্যুৎ সংযোগ যাওয়ায় আলোকিত হয়ে উঠেছে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবানের প্রত্যন্ত থানচি উপজেলা। বিদ্যুতের বাতি আলো ছড়িয়েছে ‘বাংলার দার্জিলিং’খ্যাত চিম্বুক পাহাড়ের আশপাশের পাহাড়ি গ্রামগুলোও।
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে থানচি বিদ্যুতায়ন প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এই বিদ্যুৎ সংযোগ থানচি উপজেলাবাসীর উন্নয়নের গতি অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
জেলার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ধাপে ধাপে বান্দরবানের ছয়টি উপজেলায় বিদ্যুৎ পৌঁছালেও ৪৫ বছর ধরে অবহেলিতই ছিল থানচি। দুর্গম, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এত দিন সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। এতে পর্যটনে সম্ভাবনাময় থানচি উপজেলা অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ে। এবার বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছার কারণে আলোকিত হয়ে উঠবে থানচি উপজেলাবাসী। পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে চিম্বুক পাহাড়ের গ্রামগুলোতেও।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে থানচি বিদ্যুতায়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। চিম্বুক পাহাড়ের ওয়াই জংশন এলাকা থেকে থানচি উপজেলা শহর পর্যন্ত দুটি উপকেন্দ্রসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ৮০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানা হয়েছে। গত বছরের ২৬ নভেম্বর পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি চিম্বুকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিষয়ে থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে এত দিনের অবহেলিত থানচিতে শিক্ষাক্ষেত্রে বড় সাফল্য আসবে। বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ থাকা শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া, কম্পিউটার ক্লাস এবং থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকা যন্ত্রপাতিগুলো চালু হবে। গড়ে উঠবে এ অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানাও। বিদ্যুৎ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী থানচিতে নিয়মিত থাকতেন না। আশা করছি, তাঁরাও এখন নিয়মিত কর্মক্ষেত্রে আসবেন।
জেলার বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক উজ্জ্বল বড়ুয়া জানান, বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চিম্বুকের ওয়াই জংশনে একটি উপকেন্দ্র থেকে থানচিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি, বলিপাড়া ইউনিয়ন এবং থানচি উপজেলা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
বান্দরবান বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর কাদের গনি জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এরই মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে থানচিতে তিন শতাধিক বিদ্যুৎ লাইন দেওয়া হয়েছে। আরো পাঁচশ অবেদন জমা পড়েছে। এ ছাড়া এই সংযোগের ফলে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি পরিবারকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর জানান, দুর্গম থানচি উপজেলায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়াটা এই সরকারের একটি বড় সাফল্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ৪৫ বছর বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত ছিল ওই উপজেলার মানুষ। পর্যায়ক্রমে পার্বত্য অঞ্চলের সব এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পাশাপাশি সোলার প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছানোর কার্যক্রমও চালু রয়েছে।