‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’ নিয়ে যা বললেন ডিআইজি
দুজন জঙ্গি আছে এ তথ্য নিয়ে কুমিল্লায় সদর দক্ষিণ উপজেলার গন্ধমতি এলাকায় একটি বাসা ঘেরাও করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ওই দুজনকে পাওয়া যায়নি। তবে ওই ভবনে বিস্ফোরক আছে। এসব ধ্বংস করতে অভিযান চলবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই বাড়িতে পৌঁছার আগেই ওই দুজন বের হয়ে যায় বলে জানান ডিআইজি শফিকুল।
আজ শুক্রবার কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডিআইজি শফিকুল ইসলাম এ কথা বলেন। অভিযানের ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৫ মার্চ মিরসরাই এলাকা থেকে জীবিত অবস্থায় দুই জঙ্গিকে আমরা গ্রেপ্তার করি। তাদের কাছ থেকে আমরা অর্ধ পোড়া অবস্থায় একটি মোবাইল ফোন জব্দ করি। তা ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করতে পাঠাই। সেখানে তথ্য পাওয়া যায়, নিহত ও গ্রেপ্তারের বাইরেও আরো দু-তিনজন জঙ্গি তাদের দলে ছিল। এ তথ্যটা আমরা জানতে পারি। এরপর গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে তথ্য পাই, কোটবাড়ি এলাকায় তাদের দুজন সহযোগী অবস্থান করছে। কারণ হিসেবে আমাদের জানায়, তারা মিরসরাই এলাকায় বাসা নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিচয়পত্র না থাকার কারণে তারা তা পারেনি। পরে তাদের বলা হয়, তোমরা কুমিল্লা চলে যাও। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেস আছে।’
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রলি ব্যাগের মধ্যে পাঁচ কেজি ওজন করে দুটি বড় আকারের বোমা, চারটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছিল। দুটি সুইসাইডাল ভেস্ট ছিল। এগুলো নিয়ে তারা ওই বাসায় আশ্রয় নেয়। বাড়িটা চিহ্নিত করতে আমাদের দেরি হয়। যখন চিহ্নিত করতে পারি তখন বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন জানান, একজন ছেলে বাইরে আছে এবং তিনি বের হওয়ার সময় আরেকজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে এসেছেন।’
ডিআইজি বলেন, ‘গত পরশু ছেলেটি যে কক্ষে ঘুমানোর কথা তা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেই। নির্বাচন থাকায় গতকাল কোনো অ্যাকশনে যেতে পারিনি, কেবল ঘেরাও করা হয়।’
শফিকুল বলেন, ‘প্রথমে জানালা দিয়ে গ্যাস পাঠানো হয়। যেন ভেতরে কেউ থাকলে অজ্ঞান হয়। এরপর দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় তিন তলার ছাদে যাই। সেখান থেকে দোতলা হয়ে নিচে আসি। নেমে দেখা যায়, যে জঙ্গির জন্য চেষ্টা করেছি তাকে পাওয়া যায়নি ভেতরে। কিন্তু পূর্বের গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের যে তথ্য সে তথ্য অনুযায়ী যে যে বিস্ফোরক দ্রব্য থাকার কথা সেগুলো আছে। আজ চেয়েছিলাম এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করার। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় এবং রুমের মধ্যে গ্যাসের তীব্রতার ফলে আমাদের বোম ডিসপোজাল ইউনিট ভেতরে যাওয়ার পর সফল হতে পারেনি। পরে ওরা বের হয়ে আসে। সারা রাত বাতাস ঢুকলে গ্যাসের তীব্রতা কমে যাবে। তারপর আমাদের অভিযান শুরু হবে।’
ডিআইজি শফিকুল আরো বলেন, ‘বোমগুলো বাড়ি থেকে বাইরে আনার সুযোগ নাই।’
শফিকুল আরো বলেন, ‘যে দুজন জঙ্গির এখানে থাকার কথা তাদের একজনের নাম আনার। সে সকাল ১০টায় বাড়ি মালিক যখন বের হয় তখন বাড়ি থেকে চলে যায়।
আমরা তখনো বাড়িটি চিহ্নিত করতে পারিনি। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা করতে করতে ৪টা বেজে যায়। বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলি, দেলোয়ার জানান, একজন আগে বের হয়ে গেছে আরেকজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেছেন। আমরা যখন পৌঁছাই তখন পৌনে ৪টা বাজে। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তারা যেকোনোভাবে চলে যেতে পারে। কাল সকালে বোম ডিসপোজাল টিম কাজ করবে।’