মন্ত্রী ছায়েদুলকে ঠেকাতে থাকবে ২০ হাজার মানুষ!
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছায়েদুল হক কাল রোববার বিজয়নগর উপজেলায় প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন। এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
মন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগ কাল সকাল-সন্ধ্যা সেখানে হরতাল ডেকেছে। অন্তত ২০ হাজার মানুষ মন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে রাজপথে অবস্থান নেবে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানিয়েছেন।
এদিকে সরকারি অনুষ্ঠান যেকোনো মূল্যে করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মন্ত্রীর সমর্থকরা।
মন্ত্রীর সফরের দুদিন আগে গতকাল শুক্রবার বিজয়নগরে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা কর্মকর্তার মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে যায়। অফিস কক্ষ তছনছ করে। পরে অফিস থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নামফলক ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
আজ বিকালে ভাঙচুরের ঘটনায় ১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে বিজয়নগর থানায় মামলা দায়ের করেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান।
বিজয়নগরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। এতে র্যাব-পুলিশ-বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঁইয়াসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, হরতালের দিন পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে মৎস্যমন্ত্রী ছায়েদুল হক নির্ধারিত অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে দলীয় একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, দলের স্বার্থে সেখানে যাবেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব কিছুই করা হবে।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, হরতালের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবেন। তিনি জানান, বিজয়নগরে দুই প্লাটুন বিজিবি, ৫ সেকশন র্যাব, এপিবিএন সদস্যসহ বাড়তি ১৫০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।
মন্ত্রী ছায়েদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে নবনির্মিত পশুসম্পদ কার্যালয় (ইউএলডিসি) ভবন উদ্বোধন করবেন রোববার সকাল ১০টায়। তাঁর আগমন ঠেকাতে আগামীকাল উপজেলা আওয়ামী লীগ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর আগে বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেয়।
বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বিজয়নগরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। হরতালের প্রসঙ্গ টেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত সফর নয়। মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য বিল্ডিং (প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল) উদ্বোধন করব। এতে আপনি (মোকতাদির চৌধুরী) বাধা দেবেন আর মন্ত্রী তো হাতে চুড়ি পরে বসে থাকবে না। আপনার যা ইচ্ছে করুন। আসেন, দেখান। আপনার যা দেখানোর ইচ্ছে।’
এদিক স্থানীয়রা বলছেন, নাসিরনগরের ধাক্কা আবার লেগেছে। গত বছরের ৩০ অক্টোবর পবিত্র কাবা শরিফের ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার পর হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও ১৫ মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা আবার সামনে চলে এসেছে। নাসিরনগরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী সে ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্য সুধী সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, নাসিরনগরকে বিশ্বসংবাদে পরিণত করার নায়ক মোকতাদির চৌধুরী। হিন্দু পল্লীতে হামলার দায় মোকতাদির চৌধুরীকেই নিতে হবে।
এরপর বিজয়নগরের কালকের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে না রাখায় নতুন করে মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়।