গণমাধ্যমে সেলফ সেন্সরশিপের সত্যতা আছে
দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্রীয় চাপে গণমাধ্যমগুলোতে সেলফ সেন্সরশিপ (স্বনিয়ন্ত্রণ) চলছে, যাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সাংবাদিকতা।
‘মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উপলক্ষে আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় মতিউর রহমান এই মন্তব্য করেন।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, দেশে বর্তমানে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় এক হাজার ১৩৩টি। এ ছাড়া, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক মাসিক মিলে প্রকাশনার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। আর লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৪০টি টেলিভিশনের মধ্যে সম্প্রচারে আছে ২৮টি। এসব পরিসংখ্যানকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রমাণ হিসেবে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে বলে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রস্তাব, প্রতিবেদনটা, তারা তথ্যনির্ভর নয়, সঠিক নয়, বাংলাদেশের বাস্তবচিত্রের প্রতিফলন নয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আইনের শাসনে যে আমরা যাচ্ছি, উসকানিদাতা, চক্রান্তকারীদের চাপের ভেতরে ঠেলে দিয়েছি, এটা তারা পছন্দ করছেন না।’
মন্ত্রীর সঙ্গে বক্তব্যের বিপরীত কথা বলেছেন প্রথম আলোর সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য সমস্যা আছে, চাপ আছে, কিছুটা ভয়ভীতিও আছে। কিন্তু আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে কি খুব ভেঙেচুরে, প্রকাশ্যে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা আমরা করতে পারি?’
‘তো এই যে, সেলফ সেন্সরশিপ আমার, এই যে কথা বলতে পারা না পারার মধ্যে, লেখতে পারা না পারার মধ্যে এবং এটা তো বাস্তব সত্য যে, বিষয়টার মধ্যে সত্যতা আছে।’
গণমাধ্যমের ওপর সরকারের সরাসরি চাপের চেয়ে বিজ্ঞাপন, পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য চাপ বেশি বলে মনে করেন কয়েকজন সাংবাদিক। তাঁরা মনে করেন, হত্যা-নির্যাতন ও হামলা, মামলার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যদি সাংবাদিকের পাশে না থাকে, তাহলে সেলফ সেন্সরশিপের মতো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় গণমাধ্যমে।
এ বিষয়ে দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘সাংবাদিক যদি পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হত্যার শিকার হন, তাহলে দুটো বিচার আইনে তাঁর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমি দাবি জানাচ্ছি এখানে।’
প্রধানমন্ত্রী তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘আমি যে কর্মস্থলে চাকরি করি, সেখানে আমার কতটুকু নিরাপত্তা আছে? কতটুকু আমি, আমার চাকরির নিরাপত্তা আছে? আমার বেতন-ভাতা পাওয়ার নিরাপত্তা আছে? আমার সুযোগ-সুবিধা কতটুকু আমি পাই?’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, ‘একজন বিসিএস ক্যাডারের অফিসার যেই প্রসেসে (প্রক্রিয়া), ব্যাকগ্রাউন্ডের (যোগ্যতা) কারণে নিয়োগটা পান, আমি তো মনে করি সাংবাদিকদের জন্য এ রকম কোনো একটা প্রসেস, এ রকম একটা কম্পিটেন্ট (প্রতিযোগী) প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত, যার মাধ্যমে রিক্রুটমেন্টটা হবে।’