মুশফিকের বাবা-চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্র হত্যা মামলা
বগুড়ায় স্কুলছাত্র মাশুক ফেরদৌস হত্যার ঘটনায় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের বাবা মাহাবুব হামিদ তারা, চাচা পৌর কাউন্সিলর মেজবাহুল হামিদসহ ১৬ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত মাশুকের বাবা অ্যাডভোকেট মো. ইমদাদুল হক বাদী হয়ে সদর থানায় এই মামলা করেন।
মাশুক ফেরদৌস (১৫) বগুড়া এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র। তাঁর বাবা ইমদাদুল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একাংশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
গত ১৩ মে শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ক্রিকেট ব্যাট ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে স্কুলছাত্র মাশুককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর সন্দেহভাজন হিসেবে মাশুকের বন্ধু সোহান, মামলার আসামি নাঈমের বাবা বেলাল হোসেন ও মমতাজ বেগমকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদ হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ১৬ আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
‘একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে এবং স্থানীয় মাটিডালি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে এ হত্যা মামলার আসামিদের সঙ্গে বাদী ইমদাদুল হকের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে রেখে তদন্ত চলছে’, যোগ করেন ওসি।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, মাটিডালি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাহাবুব হামিদ তারা (৫৫), তাঁর ছোট ভাই পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেজবাহুল হামিদের (৪৫) সঙ্গে মনোমালিন্য ও পারিবারিক শত্রুতা চলে আসছিল। এ কারণে এই দুজন তাঁর পরিবারের ক্ষতি করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আসামিরা গত ১১ মে রাত ১০টায় স্থানীয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে বৈঠক করে। বৈঠকে আরো ১৪ আসামি উপস্থিত ছিল।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, বৈঠকে মাশুক ফেরদৌসকে (১৫) হত্যার ছক করা হয়। গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আসামি নাঈম মাশুককে বাসা থেকে তার মা ফিরোজা বেগমের সামনে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর নাঈমের বাড়িতে মাশুককে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য পুলিশ নাঈমের বাসা থেকে মাশুকের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে।
বন্দি অবস্থায় থাকার একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে মাশুক আসামিদের কবল থেকে ছুটে বের হওয়া মাত্র তাঁরা লাঠি, হকিস্টিক, ক্রিকেট ব্যাট ও ছোরাসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে মাশুকের পিছু ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে মাটিডালি হাজিপাড়ায় বিটুলের বাড়ির সামনে মাশুককে ঘিরে ফেলে। এরপর আসামিরা ক্রিকেট ব্যাট ও হকিস্টিক দিয়ে মাশুকের মাথায় আঘাত করেন এবং এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। মাশুক রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা উল্লাস করতে করতে চলে যান বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মাশুককে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তার আগে মাইক্রোবাসের মধ্যে গুরুতর আহত মাশুক আসামিদের নাম এবং কে কীভাবে মেরেছে, তা বলে গেছে বলে মামলায় উল্লেখ করেন বাদী।
পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি, লাশের ময়নাতদন্ত, দাফন-কাফন করাসহ পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় এবং আসামিরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় মামলা দায়েরে বিলম্ব হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন স্কুলছাত্র মাশুকের বাবা।