এখনো সমঝোতা সম্ভব : খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘অস্থিরতা নিরসনে শেখ হাসিনার সঙ্গে এখনো সমঝোতা সম্ভব।’ গতকাল বুধবার ফোনে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।
খালেদা জিয়া এএফপিকে বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন ও বিবেকবান মানুষ জানেন বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কাটানোর একমাত্র উপায় হলো সর্বব্যাপী, প্রতিযোগিতামূলক ও অর্থপূর্ণ নির্বাচন। যত দ্রুত এটি আয়োজন করা যাবে, সবার জন্য ততই মঙ্গল। দেরি হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
৪০ দিন ধরে খালেদা নিজ কার্যালয়ে আটকে আছেন। এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এএফপিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া ‘গণতন্ত্র হত্যার জন্য’ শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বছরের শুরু থেকে সহিংসতা এবং অনেক মানুষের মৃত্যুর পেছনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে।
পাশাপাশি ‘খাদের কিনারায় থাকা’ দেশকে রক্ষা করতে সমঝোতায় পৌঁছানোর ওপর জোর দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এর জন্য যদি তাঁর ওপর ‘অবিচারকারীদের সঙ্গে’ আলোচনা করতে হয়, তা-ও তিনি করবেন বলে জানিয়েছেন।
কার্যালয়ে আটকে থাকা অবস্থায় এই প্রথম কোনো বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিলেন খালেদা জিয়া। সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কোনো সমঝোতা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
নির্বাচন বর্জন
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিই পুনর্ব্যক্ত করেছেন খালেদা জিয়া। তবে আলোচনা ও সমঝোতার যথেষ্ট সুযোগও আছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বলিনি যে আমাদের প্রস্তাবের সঙ্গে অন্যদের একমত হতেই হবে। তবে সব দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে মাধ্যমে এটি (নির্বাচনী সরকার) হতে হবে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা বলেছি সবার (দলের) ঐকমত্যে ও আলোচনার ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। আমরা এটাই চাই।’ তিনি বলেন, ‘সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও নির্বাচন বিধির কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।’
শেখ হাসিনার দলের কাছে প্রস্তাবের বিষয়ে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তাঁদের কাছ থেকে এ বিষয়ে আমরা কোনো জবাব পাইনি।’
৩ জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। এদের অনেকেই বাস ও ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলার শিকার হন। খালেদা জিয়া তাঁর সমর্থকদের অবরোধ কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেন। এই কর্মসূচির ষষ্ঠ সপ্তাহ চলছে।
বাংলাদেশের মানুষ নিহতের ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের হাতে জর্ডানের এক পাইলট হত্যার তুলনা করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি জানান, ‘জঙ্গি’ বা ‘খুনিদের’ সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যাওয়া হবে না।
গত সপ্তাহে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ভয়াবহ একটি পেট্রলবোমা হামলার ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই হামলায় আটজন নিহত হয়। এর আগেও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে।
তবে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, পেট্রলবোমা হামলা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কাজ। এর দোষ তাঁদের ওপর চাপানো হচ্ছে।
একে অপরকে দোষারোপ করাই দুই পক্ষের মধ্যকার গভীর অবিশ্বাসের বিষয়টি ফুঁটিয়ে তোলে, যা সমঝোতার সম্ভাবনাকেও জটিল করে তুলেছে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে দুই পক্ষের ওপরই চাপ বাড়ার কিছু আলামত দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক চাপ
৩ জানুয়ারি আটক অবস্থা শুরুর পর গতকালই প্রথম কোনো পশ্চিমা কূটনীতিক হিসেবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন। বর্তমান উত্তেজনা নিরসনের লক্ষ্যে সব দলকে সমঝোতার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনার ওপর আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘সমঝোতা ও আলোচনার জন্য সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো শক্ত ও কার্যকরভাবে চাপ দেওয়া উচিত। জাতিসংঘকে এই বিষয়ে (আলোচনা) আবার উদ্যোগ নিতে হবে... অন্যান্য জাতিকেও সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান অস্থিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রপ্রীতি অন্য যেকোনো সময়ের মতোই প্রগাঢ়। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। এমনকি একজন রিকশাচালকও জানে গণতন্ত্র কী।’

অনলাইন ডেস্ক