আদালতের পর্যবেক্ষণ

ঐশীর মামা-দাদি মানসিক রোগী ছিলেন

Looks like you've blocked notifications!
আদালতে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানের মেয়ে ঐশী রহমান। পুরোনো ছবি

পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে মেয়ে ঐশী রহমানের শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার এ রায় দেওয়া হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত জানান, ঐশীর মামা-দাদি মানসিক রোগী ছিলেন।

বেলা ১১টার দিকে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় পড়তে শুরু করেন। রায়ের শুরুতেই আদালত এ মামলার বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দেন। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘এ মামলার আসামি ঐশী রহমানকে নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। আমরা এ বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ প্রদান করব।’

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘সভ্য দেশগুলো মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না। দিনের পর দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে হিসেবে মানুষ সভ্য হয়ে ওঠেনি। প্রাথমিক শিক্ষিত থেকে উচ্চশিক্ষিত সকল স্তরেই অপরাধের প্রবণতা বেড়ে গেছে। বিচার বাস্তবতায় আমাদের দেশের ফাঁসির দণ্ড বাতিল করার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। আমাদের দেশ এখনো সভ্য দেশগুলোর মতো সেই পরিমাণ উন্নত হয়নি।’

আদালত আরো বলেন, ‘ঐশী রহমানের দণ্ড কমানোর জন্য তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষও নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেছেন। সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যায়, একজন সন্তান কর্তৃক পিতামাতা হত্যাকাণ্ড সামাজিক অবক্ষয় ছাড়া আর কিছু নয়। তবে ঐশী রহমানের মানসিক পরীক্ষা এবং ডাক্তারি সনেদের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর।’

বিচারক পর্যবেক্ষণে আরো জানান, ‘ঐশীর মামা, দাদি এরা বংশগতভাবেই মানসিক রোগী ছিল। পরীক্ষাকালে জানা যায়, ১৪ বছর বয়স থেকেই ঐশী রহমান সিসা, অ্যালকোহল, গাঁজা এবং ইয়াবা সেবন করত। এ কারণে সে ছিল আশাহীন ও সাহায্যহীন। এবং আদালতের কাছে সে বলেছে, বাবা-মাকে হত্যার পর এ বিষয়ে তার কোনো অনুশোচনা নেই।’

পর্যবেক্ষণে আদালত আরো বলেন, ‘ঐশী রহমানের বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা ছিলেন একটি প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাবা-মা দুজনেই ব্যস্ত থাকায় সে ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত। বাবা-মায়ের উচিত ছিল সন্তানকে সময় দেওয়া। পিতামাতা সময় না দেওয়ায় সে সচেতনতা এবং সুশাসন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এবং ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঐশী রহমান অ্যাজমা ও মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল। এবং ঘটনার পর আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধ নেই। এসব বিবেচনায় নিয়ে ঐশী রহমানকে আমরা ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছি। কিন্তু সাজার ক্ষেত্রে তাকে বিবেচনা করে যাবজ্জীবন দণ্ড প্রদান করলাম।’

বিচারিক আদালত রায় দেওয়ার সময় আবেগতাড়িত ছিল উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে আবেগতাড়িত হওয়া সমীচীন নয়।’

এরপর আদালত রায় ঘোষণা করে মৃত্যুদণ্ডের বদলে ঐশী রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।