‘বন্ধ’ রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে অস্ত্রোপচার, ছাত্রীর মৃত্যু
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/07/07/photo-1436278461.jpg)
সাতক্ষীরা সদরের নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে দুই দফা অস্ত্রোপচারের পর রেকসোনা (১৪) নামের এক স্কুলছাত্রী মারা গেছে। ঘটনার পরপর ওই কেন্দ্রের মালিক, চিকিৎসকসহ অন্যরা পালিয়ে গেছেন। তাঁরা মেয়েটির বাবাকে এক লাখ টাকা দিয়ে ঘটনাটি মীমাংসা করেছেন বলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
জেলা সিভিল সার্জন সালেহ আহমেদ জানান, নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো নিবন্ধন নেই। এ কারণে ৮ এপ্রিল চিঠি দিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সিভিল সার্জন আরো জানান, ওই স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সম্পর্কে তাঁর কাছে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। মেয়েটির লাশ ময়নাতদন্তও করায়নি কেউ। সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারায় ঘটনা তদন্তে ডা. মোকসেদুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রেকসোনা আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর গ্রামের শেখ নুরুল ইসলামের মেয়ে। নুরুল ইসলাম বলেন, গত ২৩ জুন রেকসোনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসা চলাকালে বোরহানউদ্দিন বুলু নামের এক দালাল তাদের ভুল বুঝিয়ে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে শহরের পলাশপোলে নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানকার মালিক ও চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম মেয়েটির অবস্থা দেখে জানান, রেকসোনার পেটের নাড়ি উল্টে গেছে। এজন্য জরুরি অস্ত্রপচার প্রয়োজন।
২৬ জুন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সাতক্ষীরার ডা. দেবদুলাল সরকারকে ডেকে এনে তার অস্ত্রপচার করান। অপারেশনের পরও তাঁর পেটের ব্যথা না কমায় ২৯ জুন ডা. দেবদুলাল ও তাঁর সহযোগী সাতক্ষীরা হাসপাতালের ডা. জয়ন্ত কুমার রেকসোনার দেহে ফের অস্ত্রোপচার করেন। সাতদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষাসহ দুই দফা অস্ত্রপচারে তাঁর প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়।
শেখ নুরুল ইসলাম জানান, এবারও সফল না হওয়ায় তীব্র যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে মেয়েটি। অবশেষে ৪ জুলাই রাতে রেকসোনা প্রচণ্ড খিঁচুনি দিতে দিতে মারা যায়।
খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পৌঁছাতেই গা-ঢাকা দেয় ডা. দেবদুলাল, ক্লিনিক মালিক শফিকুল, দালাল বুলু, নার্স ও কর্মচারীরা। সেই থেকে ক্লিনিকটিতে তালা ঝুলছে। আর ডা. দেবদুলাল এখনো গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। তাঁর সহযোগী সাতক্ষীরা হাসপাতালের ডা. জয়ন্ত কুমারও কোনো টেলিফোন ধরছেন না।
এদিকে এ ঘটনার পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দালাল বোরহান নিজেদের রক্ষা করতে আশাশুনির খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের শরণাপন্ন হয়ে তাঁর মাধ্যমে মেয়ের বাবার সাথে বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে তোড়জোড় শুরু করে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম জানান, মেয়েটির বাবা শেখ নুরুল ইসলাম খুবই গরিব। বোরহানউদ্দিন বুলু ভুল বুঝিয়ে তাঁদের নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করে। সেখানে কোনো ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। ডা. দেবদুলালকে দিয়ে ভুল অস্ত্রপচার করিয়ে মেয়েটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে মেয়েটির বাবা মামলা না করার শর্তে দেবদুলাল মেয়ের বাবাকে এক লাখ টাকা দিয়ে রফা করে নিয়েছেন। তিনি নিজেই নুরুল ইসলামের হাতে এ টাকা তুলে দিয়েছেন বলে জানান চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে শেখ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ের তো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মামলা করব কেন। তবে কাগজপত্রে সই করে দিয়েছি।’ টাকা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করে পরে চুপ থাকেন।
ক্লিনিক মালিক শফিকুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অপারেশন করেছেন ডা. দেবদুলাল। দায়িত্ব তো তাঁর। আমার সাথে কথা বলে কী লাভ।’