তুফানের বড় ভাই যুবলীগ থেকে বহিষ্কার
বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিন সরকারকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। আজ মঙ্গলবার তাঁকে বহিষ্কার করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তাঁকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।
মতিন সরকার বগুড়ায় ছাত্রীকে ধর্ষণের পর মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতনের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত হওয়া আহ্বায়ক তুফান সরকারের বড় ভাই। তিনি একই সঙ্গে বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তাঁর আশ্রয়েই তুফান সরকার বগুড়া শহরে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মতিন সরকার র্যাবের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ নয়টি মামলা বিচারাধীন। একটি অস্ত্র মামলায় তাঁর ২৭ বছরের সাজা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তা স্থগিত আছে। এ পর্যন্ত আবদুল মতিনকে পুলিশ চারবার, র্যাব দুবার এবং যৌথ বাহিনী একবার গ্রেপ্তার করেছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মতিন সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যেসব নিউজ এসেছে সেই ভিত্তিতে আপাতত সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে তা তদন্তের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ স্থায়ী বহিষ্কারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
মেয়েকে ধর্ষণের পর মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার ও তাঁর সহযোগীরা এসএসসি পাস ওই ছাত্রীকে ভালো কলেজে ভর্তি করার কথা বলে গত ১৭ জুলাই শহরের নামাজগড় এলাকায় তাঁদের বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে এ ঘটনা কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ধর্ষণের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে গত শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা ও তাঁর বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার রুমকিসহ কয়েকজন মিলে ওই ছাত্রী ও তাঁর মাকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেন। সেই সঙ্গে বগুড়া ছাড়ার হুমকি দেন। মা ও মেয়েকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে মেয়ের মা বলেছেন, ‘আমরা সমাধানের জন্য কমিশনারের (কাউন্সিলর) কাছে গেছি। কমিশনার উল্টা মা আর মেয়ের চুল কেটে, এসএস পাইপ দিয়ে আমাদের মা-মেয়েকে মারছে। অনেক নির্যাতন করছে। পাঁচ মিনিট পরপর টর্চারিং, পাঁচ মিনিট পরপর আমাদের মাইর। কমিশনার (কাউন্সিলর), কমিশনারের মা ও তাঁর বোন আশা। এই তিনজনার চরম বিচার চাই, চরম শাস্তি হোক।’
শুক্রবার রাতেই পুলিশ মূল আসামি তুফান, তাঁর সহযোগী রূপম, আলী আজম ও আতিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আতিকুর। রোববার বাকি তিনজনকে আদালতে হাজির করে তিনদিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
রোববার দুপুরে পুলিশ তুফান সরকারের শ্বশুর জাহিদুল ও নাপিত জীবনকে বগুড়া শহর থেকে গ্রেপ্তার করে। সন্ধ্যার পর বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ দল পাবনা শহরের হেমায়েতপুরে অভিযান চালিয়ে কাউন্সিলর মার্জিয়া আকতার রুমকি ও তাঁর মা রুমিকে গ্রেপ্তার করে। অপরদিকে রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে ঢাকায় ডিবি পুলিশের একটি দল সাভার থেকে তুফানের স্ত্রী আশা, গাড়িচালক জিতু ও সহযোগী মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার কাউন্সিলর রুমকিকে চারদিনের ও বাকি ছয় আসামিকে দুদিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।