দাসিয়ারছড়ায় পতাকা উত্তোলন, চলছে উৎসব

Looks like you've blocked notifications!
সদ্যবিলুপ্ত কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে আজ শনিবার ভোরে পতাকা উত্তোলন করেন ফুলবাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ। ছবি : এনটিভি

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সাবেক দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে আজ শনিবার থেকে শুরু হয়েছে নতুন সকাল। এই সকাল নিয়ে এসেছে মুক্তির স্বাদ।

গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ভারতের ওই ছিটমহলের ভূখণ্ড বাংলাদেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে একীভূত হয়ে যায়। ফলে ৬৮ বছর পর নাগরিকত্ব ফিরে পান এ এলাকার মানুষ।

আজ শনিবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটে দাসিয়ারছড়ার কালির হাট বাজারে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ফুলবাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) বদরুদ্দোজা।

পরে বেলা ১১টার দিকে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলী কালির হাটে পৌঁছে আরো একবার পতাকা উত্তোলন করেন। আর এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের মুক্তির উৎসব শুরু করে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।

এ সময় কেক কেটে, এলাকাবাসীর মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ উদযাপন করা হয়। এরপর দুপুর ২টায় শুরু হয় আলোচনা সভা।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. জাফর আলী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মঈনুল হক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ও সাবেক দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের সভাপতি আলতাফ হোসেন।

অনুষ্ঠানে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করেন স্থানীয় বক্তারা।

আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং তা চলবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দাসিয়ারছড়ার স্থানীয় অধিবাসীরা গান, নাটক, নাচ ও জারি-সারি গান পরিবেশন করছেন।

সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে এলাকার মানুষ এসব আনুষ্ঠানিকতা উপভোগ করছেন।

গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা এখন থেকে বাংলাদেশের নাগরিক। আজ সকালে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এটিকে সম্মান প্রদর্শন করে পেয়েছি পূর্ণ মর্যাদা।’

মঈনুল হক বলেন, ‘আমরা শনিবার মধ্যরাত থেকেই বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছি। এখন থেকে আমাদের আর কেউ ছিটের লোক বলবে না। এখন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, অতি দ্রুত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এই এলাকার মানুষের জন্য নিশ্চিত করা।’

বাংলাদেশের ভেতরে থাকা সদ্যবিলুপ্ত ১১১টি ছিটমহলে একযোগে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এ সময় শত শত কণ্ঠে বেজে ওঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।

ঐতিহাসিক এ বিজয়ে উল্লসিত-উচ্ছ্বসিত ছিটমহলের বাসিন্দারা। দীর্ঘ ৬৮ বছর প্রতীক্ষার পর তাদের এ শুভদিনের সূচনা ঘটে। এর আগে শনিবার মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে দাসিয়ারছড়ায় ৬৮টি মোমবাতি জ্বালিয়ে দীর্ঘ ৬৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটান বাসিন্দারা।

এ সময় আনন্দ-উল্লাস ও নাচ-গানের মাধ্যমে আর মশাল হাতে আনন্দ মিছিল করে বিজয় উদযাপন করেন স্থানীয়রা।