ছিটের জমি নিয়ে ‘অন্ধকারে’ বাসিন্দারা

Looks like you've blocked notifications!
৬৮ বছরের বন্দিদশা কাটিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ‘ছিটমহল’। সেখানকার বাসিন্দারা এখন বাংলাদেশ ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা। ছবি : ফোকাস বাংলা

৬৮ বছরের বন্দিদশা কাটিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ‘ছিটমহল’। সেখানকার বাসিন্দারা এখন বাংলাদেশ  ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই আনন্দে মাতোয়ারা এ সব এলাকায় বাসিন্দারা। কিন্তু এ বাঁধভাঙা আনন্দের মাঝেও সদ্যবিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে অজানা এক আতঙ্ক।

আজ শনিবার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সাবেক চারটি ছিটমহলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনটি বিষয় নিয়ে তাঁরা এখনো অন্ধকারে রয়েছেন। এগুলো হচ্ছে জমির মালিকানা, ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও জন্মসনদ। এর মধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে এক অজানা আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে তাঁদের এখনো পরিষ্কার করে কিছু জানানো হয়নি।

এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ সব বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে কী সিদ্ধান্ত রয়েছে তা তিনি জানাতে পারবেন না বলে জানান।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, প্রয়োজনে সরকার সমস্যা সমাধানের নিরিখে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত জানাবে। প্রক্রিয়া কেবল শুরু হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ছাড়া সাবেক ছিটমহলগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার ব্যাপারে পুলিশ তৎপর বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান। তিনি জানান, সাবেক ছিটমহলে পুলিশি টহল দেওয়া হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা সমস্যার ব্যাপারে স্থানীয় থানায় অভিযোগ করতে পারবে। পুলিশ বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তাদের সব ধরনের সহায়তা করবে। 

আজ শনিবার সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা মতিউর রহমান ও যতীন্দ্র নাথ রায় ‘তিন সমস্যা’ নিয়ে কথা বলেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে। তাঁরা জানান, বাংলাদেশে অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলগুলো পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার অন্তর্গত ছিল। এ কারণে এ সব ছিটমহলের ভূমিসংক্রান্ত সব নথি কোচবিহার জেলা প্রশাসনের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ছিটমহল পত্তনের গোড়ার দিকে ছিটমহলগুলোর ভূমি মালিকদের বিক্রীত জমির দলিল-দস্তাবেজ সীমানা পেরিয়ে কোচবিহারে গিয়ে সম্পন্ন করতে হতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সীমান্ত পারাপার কঠিন হলে বাসিন্দাদের ভারত যাওয়া-আসায় নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। একপর্যায়ে তাঁরা বাধ্য হয়ে ভারতীয় সরকারি স্ট্যাম্পে স্থানীয়ভাবে লিখে বেচাকেনা করতেন।

সাবেক ছিটমহলবাসীদের কাছে রক্ষিত এসব স্ট্যাম্প শেষ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাসিন্দারা দেশীয় সাদা কাগজে স্থানীয় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ও স্বাক্ষরে জমির বেচাকেনা করতেন। এ প্রথা গতকাল (শুক্রবার) পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।

তাঁরা জানান, কালের পরিক্রমায় প্রয়োজনের তাগিদে একই জমি একাধিক মালিকের কাছে একাধিকবার হস্তান্তরের ঘটনা ঘটে। এ কারণে একই দাগের জমি কারো কাছে মালিকানা স্বত্ব হিসেবে সরকারি কার্যালয়ের দলিলে, কারো কাছে শুধুই স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরে; আবার কারো কাছে রয়েছে সাদা কাগজে লিখে নেওয়ার সর্বশেষ মালিকানার প্রমাণপত্র। কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে এ ভূমি মালিকানা? আশঙ্কা সাবেক ছিটমহলবাসীর। কেননা মূল নথিপত্র ভারতে থাকায় একই জমির একাধিক মালিকের দাবিদার হাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা, যা নিয়ে বিরোধ চরম আকার ধারণ করতে পারে।

এসব এলাকার বাসিন্দারা আরো বলেন, সাবেক ভারতীয় ছিটমহলের ৮০ শতাংশ জমির মালিকানায় রয়েছে বাংলাদেশি প্রভাবশালীরা। যারা প্রতিটি সরকারের আমলে আনুকূল্য পেয়ে থাকেন। এসব মালিকদের কাছে ছিটমহলবাসী কোনোভাবেই পেরে উঠবে না। এ সমস্যা নিরসনে ভারত সরকারের জরিপ শিটের মূল মানচিত্র দেখে বর্তমান দখলকারদের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি তুলছেন তাঁরা।

একই সমস্যা ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি ও জন্মসনদ নেওয়াকে কেন্দ্র করেও। সাবেক ছিটমহলগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ বাসিন্দা কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশের ভোটার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এঁরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ সংগ্রহ করেছেন। এ কাজটি সাবেক ছিটমহল লাগোয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভোটের রাজনীতির কারণে করেছেন।

এখন এ দেশে রয়ে যাওয়া ছিটবাসী আবার নতুন করে ভোটার হবে, নাকি অন্তর্ভুক্তি ভোটার হিসেবে স্থানান্তর হবেন তাও তারা জানেন না। তবে নির্বাচন কমিশনের ভোটার স্থানান্তরের একটি ঘোষণায় তাঁদের নাগরিকত্বের প্রমাণ মেলে।