সাত খুন মামলার সাক্ষীদের মারধরের অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার সাক্ষীদের মারধরের অভিযোগ করেছেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।
urgentPhoto
আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে সাত খুন মামলার আসামিদের আদালতে নিয়মিত হাজিরার পর সাংবাদিকদের বাদী সেলিনা ইসলাম এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সাক্ষীরা যাতে সাক্ষ্য দিতে না পারেন সে কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি পাওয়া ইয়াসিন মিয়ার বাড়িতে নিয়ে মারধর করা হচ্ছে।
এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার বিচার হোক সরকার তা চায় না।
আজ মামলার অন্যতম প্রধান আসামি র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, কমান্ডার এম এম রানা ও মেজর আরিফ হোসেনসহ ২২ আসামি হাজিরা দেন।
আসামিদের পরবর্তী হাজিরা ৬ সেপ্টেম্বর। এর আগে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার এবং কমান্ডার এম এম রানা ও মেজর আরিফ হোসেনকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম চাঁদনী রূপমের আদালতে হাজির করা হয়। অন্য আসামিদের আনা হয় নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে। অভিযোগপত্রভুক্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ১৩ আসামি পলাতক। বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন পলাতক আসামিদের অস্থাবর মালামাল ক্রোক করার আবেদন জানান। কিন্তু আদালত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেননি।
সেলিনা ইসলাম জানান, তাঁর দেওয়া এজাহার থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া, ভারতে পলাতক নূর হোসেনের ক্যাশিয়ার হাসমত আলী হাসু, আমিনুল হক রাজু, ইকবাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেনকে অভিযোগপত্র থেকে পুলিশ বাদ দেওয়ায় তিনি যে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন, সেটির শুনানি ৯ আগস্ট। তিনি বলেন, ‘কিন্তু অভিযোগপত্র থেকে রেহাই পেয়ে তারা এখন পাল্টা মামলা করে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের স্বজনদের ধরে নিয়ে মারধর করছে।’
অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিরা গত ১ আগস্ট মামলার সাক্ষীদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন।
সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার স্বামীর আত্মীয়স্বজন, আমার ভাই সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমার সঙ্গে তারা যেন না আসে, এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। যে মামলাটি দেওয়া হয়েছে ওই সময় তো লাশ দাফন-কাফনের জন্য আমরা নদীর ওপারে ছিলাম। ইয়াসিন, হাসু, রাজু, আনারের ওপর এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত ছিল। হয়তো ওই সময় তারাই আগুন দিয়েছে। সেই মামলায় এক বছর পর আমাদের নাম আসবে আমাদের আত্মীয়স্বজনদের নাম আসবে। সাংবাদিকদের ভিডিওতেও তো আছে কারা ওই সময় তার পাম্প পুড়াইছিল এবং তার বাড়িঘর ভাঙচুর করেছিল। ’
সেলিনা আরো বলেন, ‘আমার স্বামীকে মেরেও তাদের ক্ষোভ কিন্তু শেষ হয়নি, এখন ক্ষোভ শুরু হচ্ছে যাতে আমরা বিচার না পাই। আমাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে এবং আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। কালকেও পাঁচজনকে ইয়াসিনের বাড়িতে নিয়ে পিটাইছে। ইয়াসিন সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। আবার সে সাত খুন থেকে বেঁচে এলাকায় উৎপাত চালাবে। আপনারা গোপনে খোঁজ নিয়ে দেখবেন এলাকায় ইয়াসিনের অত্যাচারে মানুষ পাগল হয়ে যাইতেছে।’
আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আপনারা জানেন যে নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম মামলার এজাহারকারী। ডিবি যে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেছে, সেই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে তিনি নারাজি দরখাস্ত করেছিলেন। তা নাকচ না হওয়ার কারণে দায়রা জজ আদালতে তিনি একটি রিভিশন মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। সে রিভিশন মোকদ্দমা দায়ের করার কারণে এই মামলার যে এলসিআর সেটা দায়রা জজ আদালতে থাকায় বিকল্প নথিতে আজকে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর এই মামলার পুনরায় আদেশের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’
আইনজীবী সাখাওয়াত বলেন, ‘মিথ্যে মামলা করেই তারা ক্ষান্ত হননি। মামলার সাক্ষী ও বাদীর আত্মীয়স্বজনদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছেন। মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সাক্ষীরা যাতে সাক্ষ্য দিতে না পারে এ জন্য বিভিন্ন মামলা-মোকাদ্দমা করে তাদের হয়রানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে একটা জিনিস বুঝেছি যে, অভিযোগপত্র থেকে যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারাই ক্ষিপ্ত হয়ে এই মিথ্যে মোকাদ্দমা দায়ের করেছে।’
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে তুলে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে হত্যা করা হয়। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নাফিজ আশরাফ, নারায়ণগঞ্জ