মায়ের কাছে নিলয়, রাতেই শেষকৃত্য

Looks like you've blocked notifications!
নিহত ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের মায়ের আহাজারি। ছবি : এনটিভি

ঢাকায় নিহত ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের লাশ এসে পৌঁছেছে তাঁর গ্রামের বাড়িতে, মায়ের কাছে। শনিবার রাত সোয়া ১০টায় নীলাদ্রির মরদেহ পিরোজপুর সদরের টোনা ইউনিয়নের চলিশা গ্রামে পৌঁছায়। স্বজনরা জানিয়েছেন আজ রাত ১২টার দিকে তাঁর শেষকৃত্য হবে। নীলাদ্রির বোন জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পারিবারিকভাবে শেষকৃত্যের সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।

নীলাদ্রির লাশ পৌঁছানোর পর চলিশার গ্রামে চলছে মাতম। গ্রামে সবাই তাঁকে চিনত নান্টু নামে। পরিচিতজনরা এককথায় জানালেন, খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল নান্টু। চলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর তেজদাসকাঠি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন তিনি। এরপর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ পিরোজপুরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি যে নিলয় নীল নামে ব্লগে লিখতেন তাও গ্রামের মানুষের কাছে অজানা ছিল। তবে অনেকেই জানতেন, তিনি ঢাকায় গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক ছিলেন।urgentPhoto

মাত্র সপ্তাহ দুই আগে বাড়ি থেকে ঘুরে গেছেন নীলয়। টানা ১৯ দিন ছিলেন গ্রামের বাড়িতে। মা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় ছেলেকে ঢাকায় ফিরে যেতে বারণ করেছিলেন, বলেছিলেন বাড়িতে বসে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। নীলাদ্রি বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কা থেকে ঘুরে এসে বাড়িতে থাকবেন। সেই এলেন, তবে লাশ হয়ে। ছেলের লাশকে ঘিরে মায়ের আহাজারি যেন আর থামছেই না।

নান্টুর একমাত্র বোন জয়শ্রী ভাইয়ের কোনো শক্র নেই উল্লেখ করে হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন। জয়শ্রী জানান, গত ২৫ জুলাই নীলাদ্রি ঢাকায় যান। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ও মায়ের সঙ্গে নীলাদ্রির শেষ কথা হয়। 

এলাকার মানুষ এনটিভিকে বলেন, নীলাদ্রি আর ফিরে আসবেন না। তবে নীলাদ্রির হত্যাকারীদের যথাযথ বিচার করলে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে আর কিছুটা হলেও শান্তি পাবে এলাকার মানুষ।

এদিকে, নীলাদ্রি হত্যার বিচার চেয়েছে তাঁর গ্রামবাসী এবং পিরোজপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে নিজ বাসায় ব্লগার নীলাদ্রিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তাঁর শরীরে ১৪টি কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।

নিহত নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় নীল নামে ব্লগে লিখতেন। ফেসবুকেও তিনি ওই নামেই ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পুলিশ উগ্রপন্থীদের সন্দেহ করছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল সন্ধ্যায় এক ই-মেইল বার্তায় হত্যার দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম নামের একটি সংগঠন।

এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আশামণি বাদী হয়ে গতকাল রাতেই খিলগাঁও থানায়  অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। পরিকল্পিতভাবে নীলাদ্রি হত্যাকাণ্ডের একদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

চলতি বছরের সাত মাসে এ নিয়ে চারজন লেখক ও ব্লগার খুন হলেন। এর আগে ২০১৩ সালে খুন করা হয় ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে। অভিজিৎ রায়, ওয়াসিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাসের পর সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের শিকার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়। ব্লগারদের কাউকে রাজপথে আবার কাউকে বাসায় ঢুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সব হত্যাকাণ্ডের ধরন একই।

তবে রাজীব ও বাবু ছাড়া আর কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত কাউকে আটক করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।