শেরপুরে ন্যাশনাল সার্ভিসের বাছাই নিয়ে হুলস্থুল
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিতে প্রার্থী বাছাইয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করেছেন বঞ্চিত প্রার্থীরা। তবে উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রার্থী বাছাই বৈধভাবেই করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ন্যাশনাল সার্ভিসে অন্তর্ভুক্তি থেকে বাদ পড়ারা বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে যোগ দেয়। চাপের মুখে একপর্যায়ে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হামিদুর রহমানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে পাশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।
এমন অবস্থায় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। কিন্তু দুই শতাধিক বিক্ষোভকালী পুলিশের সামনেই বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। পরে শ্রীবরদী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন খোকা এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে বিক্ষোভ প্রশমিত করে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কার্যালয়ে ফেরত পাঠান।
এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল হক জেনারেল অভিযোগ করে বলেন, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিতে প্রার্থী বাছাইয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে অন্য উপজেলার বাসিন্দা, বয়স হয়নি, বয়স পেড়িয়ে গেছে, এমনকি এসএসসি পাসও করেনি এমন প্রার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবার অনেক প্রকৃত প্রার্থী চাহিদা মাফিক অর্থ দিতে না পারায় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি। অন্যদিকে বাইরের উপজেলার প্রার্থীদের নেওয়ায় শ্রীবরদী উপজেলার প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, অনেকটা প্রকাশ্যে বাণিজ্য করলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব রয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর মনোনীত প্রার্থীদের মোবাইল ফোনে এসএমএস ও ফোনের মাধ্যমে মূল সনদ জমাদানের কথা বললেও বাণিজ্য করার জন্য বৈধ প্রার্থীদের এসএমএস বা ফোন না দিয়ে অবৈধপ্রার্থীদের কাগজপত্র জমা দিতে বরা হয়।
বিক্ষোভকারী রেহানা জামান দাবি করেন, তাঁর ন্যাশনাল সাভিসে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সব যোগ্যতা রয়েছে। প্রথম রেজাল্টে নাম না থাকায় আপিলও করেছিলেন। কিন্তু আপিলের ফলাফলেও তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বৈধভাবে বাদ পড়াদের অন্তর্ভুক্তির জন্য চাপ দিলে আমি ইউএনওর কাছে যেতে বলি। কিন্তু তাঁরা না গিয়ে আমাকে যেতে বলে এবং আমার রুম থেকে আমাকে বের করে দেয়।’
ইউএনও ও ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির উপজেলা সমন্বয়কারী খালেদা নাছরিন এ ব্যাপারে বলেন, নতুন করে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। সব বৈধ প্রাথীদের নেওয়া হয়েছে। যারা অবৈধ তাঁরাই সমস্যা সৃষ্টি করে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করছেন।
গত ২৯ আগস্ট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় অস্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য শ্রীবরদী উপজেলার বেকার যুবক ও নারীদের কাছে দরখাস্ত আহ্বান করে। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর।
পাঁচ হাজার ৫৪৬ জন প্রার্থী এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন জমা দেয়। গত ২ ডিসেম্বর ৩ হাজার ৭৭০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে বাদপড়া প্রাথীদের চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে আরো ৬০৭ জনকে তালিকাভুক্তি করে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় ফলাফল প্রকাশ করা হয়।