একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিন

ক্রেতার চেয়ে দর্শণার্থীরাই বেশি

Looks like you've blocked notifications!
অমর একুশে গ্রন্থমেলার মেলার তৃতীয় দিন আজ শনিবার দর্শণার্থীদের ভিড় বাড়ে। ছবি : ফোকাস বাংলা

অমর একুশে গ্রন্থমেলার মেলার তৃতীয় দিনে দর্শণার্থীদের ভিড় বেড়েছে। এতে শুরুর দিকেই জমে উঠেছে মেলা। আজ শনিবার ছুটির দিনের সময় ও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরিবার ও প্রিয় মানুষকে নিয়ে অনেকেই চলে এসেছেন গ্রন্থমেলায়। ক্রেতা-দর্শণার্থীদের পদচারণায় মুখর মেলা প্রাঙ্গণ।

মেলায় আগতরা জানান, শুরুতে মেলায় ভিড় কম থাকে এমন ধারণা থেকে আয়েশ করে ঘুরতে এসেছেন অনেকে। আবার মাসব্যাপী এ মেলা পুরোপুরি উপভোগ করতে বেশ কয়েকবার আসবেন অনেক বইপ্রেমী ক্রেতা। তাছাড়া ছুটির সুযোগ কাজে লাগাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় ছুটেছেন সব বয়সী ক্রেতা-দর্শণার্থীরাই। কেউ এসেছেন ঘুরতে কেউ-বা আবার কেনাকাটা করতে। সব মিলিয়ে বিক্রেতাদের মুখেও দেখা গেল কিছুটা সন্তুষ্টির ছাপ।

বিকেলের পর থেকে মেলা প্রাঙ্গণের দিকে দর্শণার্থীদের ভিড় ক্রমেই বেড়েছে। ভিড় বাড়ার সঙ্গে প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোতে বিক্রি বেড়েছে। আগের দিনগুলোতে বিক্রেতারা সাজ-সজ্জায় ব্যস্ত থাকলেও আজ বেশিরভাগ স্টলের দৃশ্য ছিল ভিন্ন। বেচাবিক্রি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন প্রায় সব স্টলের বিক্রেতারাই।

চৈতন্য প্রকাশনীর বিক্রেতা রনি বলেন, দ্বিতীয় দিনের চেয়ে তৃতীয় দিনের বেচাকেনা ভালো। পাঠকরা এসে তাদের পছন্দমতো বই দেখছে, ভালো লাগলে কিনছে।

শিখা প্রকাশনীর মালিক নজরুল ইসলাম বাহার বলেন, মাত্র মেলা শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে বইপ্রেমীরা মেলায় আসবে, ঘুরবে আর যদি পছন্দ হয় তাহলে বই কিনবে। তিনি বলেন, মেলায় স্টলবিন্যাস ভালো না। প্যাভিলিয়ন ঠিকমতো সাজানো না। স্টলগুলো পরিকল্পিতভাবে দেওয়া উচিত ছিল।

তৃতীয় দিনের গ্রন্থমেলার প্রথমে শিশু প্রহর ছিল। শিশুরা বাবা মায়ের সাথে প্রথম শিশু প্রহরে এসেছিল। এজন্য সকাল বেলাটা মুখর ছিল শিশুদের কলকাকলিতে। বেলা ১১টায় গ্রন্থমেলার দ্বার খোলার আগে লাইনে দাঁড়িয়ে শিশু-কিশোর ও অভিভাবকরা অপেক্ষা করছিলেন। দ্বার খোলার পর শিশুরা স্টলে ঘুরে বই দেখে। অনেকেই আবার মেলা চত্বরে ছবি তোলা আর খেলায় ব্যস্ত ছিল। দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর।

মেলার দ্বিতীয় শিশু প্রহরে সিসিমপুর মঞ্চে বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছিল বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মাদ স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী মারিয়া মাহমুদ। সে বলে, আব্বুর সঙ্গে মেলায় এসে প্রতি বছর বিভিন্ন রকমের বই কিনি। এবার ভূতের ডাক্তার, পান্তাবুড়ি, গাছভূত বই কিনেছি। আরো কিছু বই কিনব।

এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বইপ্রেমীদের মেলায় ভিড় জমাতে দেখা গেছে। কেউ আসে পরিবার-পরিজন নিয়ে, আবার কেউবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। তারা স্টল ঘুরে ঘুরে নতুন বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখেন। কেউ পড়েন ভূমিকা, পছন্দ হলে কিনেও নেন কেউ। প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন অনেকেই।

মেলার মূলমঞ্চের আয়োজন

শনিবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শফিউল আলম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মো. মনিরুল ইসলাম ও সরকার আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজী রফিকুল আলম।

প্রাবন্ধিক বলেন, উনিশ শতকের যে কয়েকজন খ্যাতিকীর্তি মুসলমানের জন্ম হয়েছিল তাঁদের অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ। তিনি বাঙালি মুসলমানদের সামাজিক ইতিহাসে যেমন অনন্য পুরুষ, তেমনি স্ব-সম্প্রদায়ের ভেতরে সাধারণ শিক্ষার প্রসারকল্পে তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণযোগ্য।

শফিউল আলম বলেন, খান বাহাদুর আহছানউল্লাহর সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনকে নানামাত্রিকভাবে দেখা যায়- শিক্ষাবিদ, শিক্ষাসংস্কারক, পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা, সাহিত্যিক, ধর্মবেত্তা, সংস্কারমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সৃজনশীল মানুষ- এ রকম নানা অভিধায় তাঁকে চিহ্নিত করা যায়।

আলোচকবৃন্দ বলেন, বাঙালি জাতিসত্তার সবগুলো উপকরণই খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহর জীবনচর্চার সাথে মিশে ছিল। শিক্ষাদীক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া বাঙালি মুসলমানদের সামনে এগিয়ে নিতে তিনি কাজ করে গেছেন। বাংলা ভাষা হিন্দু না মুসলিমের- এ বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি ঘোষণা করেছেন যে বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের উন্নতির জন্য বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা সংস্কার ও প্রসারে খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ যে অবদান রেখে গেছেন তা আমাদের স্মরণে রাখাতে হবে। আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি মানবসেবার অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সুজিত মোস্তফা, এ কে এম শহীদ কবীর পলাশ। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন পিনু সেন দাস (তবলা), রবিনস্ চৌধুরী (কী-বোর্ড) এবং ফিরোজ খান (সেতার)।

রোববারের অনুষ্ঠানসূচি :

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শহিদ রণদাপ্রসাদ সাহা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রতিভা মুৎসুদ্দি। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন রমণীমোহন দেবনাথ, হেনা সুলতানা ও আজিজুর রহমান আজিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রফিকুল ইসলাম। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।