বিচার বিভাগের ক্ষত পূরণ করাই চ্যালেঞ্জ
সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে সংবর্ধনায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেছেন, আপনার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগের যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করা এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি এসব কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি বলেন, দেশে আজ চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান। এই সুযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা করছে। একেকটি মামলায় শত থেকে হাজারজনকে আসামি দেখানো হচ্ছে। আর অবাধে গ্রেপ্তার-বাণিজ্য চলছে।
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বিএনপিপন্থী এই আইনজীবী বলেন, এই মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতিও রক্ষা পায়নি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক মামলা দিয়ে মানসম্মান ক্ষুণ্ণ করছে যা অতীতে আমরা কখনো দেখিনি।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগের যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করা এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে যেভাবে বিদায় করা হয়েছে এবং এর ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে করে বিচার বিভাগ আজ মহাসংকটের সম্মুখীন। একদিকে নিম্ন আদালতগুলোর ওপর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অবাধ হস্তক্ষেপ অপরদিকে অসংখ্য মামলার ভাবে ভারাক্রান্ত নিম্ন আদালতগুলো হিমশিম খাচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত হচ্ছে লাখ লাখ মিথ্যা বানোয়াট রাজনৈতিক ফৌজদারি মামলা।
বিচারের জন্য দক্ষ এবং নিরপেক্ষ বিচারকের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে আইনজীবীদের এই নেতা বলেন, যারাই নিরপেক্ষ বিচার করতে চান তাঁরা সরকারের অহেতুক চাপে ইচ্ছে করলেও নিরপেক্ষ বিচার করতে পারেন না। বিচারপ্রার্থীরা আজ হতাশাগ্রস্ত এবং বিচার বিভাগের ওপর তাদের আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে।
জয়নুল আরো বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের রক্ষক এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় শেষ আশ্রয়স্থল। আপনি ১৯৯৯ সালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন এবং ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আপনি হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ওই সময় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। পরবর্তী সময়ে আপনার বিচারকার্যে দক্ষতা, যোগ্যতা এবং বিচারিক সুলভ দায়িত্ব পালনের জন্য ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ লাভ করেন।
বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন পুলিশের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য আগাম জামিনের ব্যাপারে হাইকোর্ট বিভাগে ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর বিষয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। নতুন প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগের সময় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেও স্মরণ করিয়ে দেন বার সভাপতি।
গত শুক্রবার মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। একই দিন ১ অক্টোবর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আবদুল ওয়াহহাব মিয়া পদত্যাগ করেন। নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে বাছাইয়ের পরের দিন শনিবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ থেকে শপথ নেওয়ার পর সকালে প্রথম কার্যদিবস শুরু হয় তাঁর।