নিজাম হাজারীর এমপি পদে থাকার প্রশ্নে ফের একক বেঞ্চ গঠন
ফেনী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্বপদে থাকা নিয়ে রুল নিষ্পত্তির জন্য নতুন করে একক বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকীর একক বেঞ্চে মামলাটি কার্যতালিকায় এসেছে বলে জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী সত্যরঞ্জন মণ্ডল।
এর আগে হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চ এই রিট শুনতে ব্রিবত বোধ করেন। গত ১৫ জানুয়ারি বিচারপতি ফরিদ আহমেদের হাইকোর্টের একক বেঞ্চ এ মামলার শুনানিতে বিব্রতবোধ করেন।
২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় নিজাম হাজারীর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু দুই বছর ১০ মাস কম সাজা খেটে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।’ পরে এই প্রতিবেদন যুক্ত করে নিজাম হাজারীর এমপি পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।
রিটের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ফেনী-২ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর পদে থাকা নিয়ে বিভক্ত রায় দেন হাইকোর্ট।
ওইদিন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এমদাদুল হক এমপি পদে নিজাম হাজারীর থাকাকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
অন্যদিকে, একই বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নিজাম হাজারীর বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজ করে দেন।
রায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, নিজাম হাজারী সাজা খাটার বিষয়ে তথ্য গোপন করে এমপি হয়েছেন। তাই রুল গ্রহণ করে তাঁর এমপি পদ অবৈধ ঘোষণা করা হলো।
অপরদিকে, কনিষ্ঠ বিচারপতি নাজমুল আহসান তাঁর রায়ে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ নিজাম হাজারীর সাজা মওকুফের বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সাক্ষ্য নেওয়ার সুযোগ নেই। হাইকোর্ট কেবল আইনি বিষয় দেখতে পারে। কিন্তু এমপিদের পদে থাকা কিংবা না থাকার বিষয়ে রায় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই হাইকোর্টের। তাই তাঁর এমপি পদে থাকা বৈধ ঘোষণা করা হলো। আদালতে নিজাম হাজারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী ও সত্যরঞ্জন দত্ত। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী।
হাইকোর্টের বিভক্ত রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। পরে প্রধান বিচারপতি তৃতীয় বেঞ্চে পাঠালে হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চ শুনতে বিব্রতবোধ করেন। পরে আজ প্রধান বিচারপতি শুনার জন্য হাইকাটের এককবেঞ্চ গঠন করে দেন।
১৯৯১ সালের ২৪ জানুয়ারি দায়ের করা অস্ত্র মামলায় কারাভোগ করছিলেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। কিন্তু তাঁর মুক্তির পর একটি জাতীয় দৈনিকে ২০১৪ সালে ‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন দাখিল করা হয়। অস্ত্র মামলায় সাজা কম খাটার অভিযোগ এনে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।
এ রিট আবেদনে ২০১৪ সালের ৮ জুন হাইকোর্ট এক আদেশে ফেনী-২ আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এছাড়া নিজাম হাজারীর সাজা খাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র তলব করেন। কিন্তু নিজাম হাজারী ঠিক কবে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন সে বিষয়ে আদালতের নথিতে দুই রকম তথ্য থাকায় গত ২৮ নভেম্বর এ মামলার সর্বশেষ তথ্য জানতে চেয়েছিলেন আদালত। হাইকোর্টের ওই আদেশ অনুযায়ী, কারা কর্তৃপক্ষ ১ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানির পর নিজাম হাজারীর সাংসদ পদের বৈধতার বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য ৬ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেন আদালত।