শরীয়তপুর আ. লীগের সভাপতিসহ কারাগারে ৯
বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রব মুন্সিসহ নয়জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আতাউর রহমান ওই আদেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সি, বিদ্যালয়ের সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম হাওলাদার, আইউব আলী মল্লিক, আব্দুল কুদ্দুস মোল্যা, সুজন সাহা, সংগীতা সাহা, রণজিৎ কুমার সাহা ও জমি গ্রহীতা জাহাঙ্গীর আলম।
বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় পৌরসভার মেয়র আব্দুর রব মুন্সিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত। আজ বুধবার মামলার নয়জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ১০ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-১ শাখা হতে আব্দুর রব মুন্সিকে পৌরসভার মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মামলার বিবরণে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব রেকর্ডভুক্ত উত্তর মধ্যপাড়া মৌজার ৪৩৮নং খতিয়ানের ২০, ২১, ২৭ ও ২৮ নং দাগের তিন একর ৭১ শতাংশ জমি বিক্রি করা হয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী যার সর্বনিম্ন বাজার দর ছিল চারকোটি ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৫ টাকা। ওই জমি বিক্রির জন্য আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ২০১২ সালের ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করেন। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে দরপত্র দাখিল করে। ওই তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে জে সরদার করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রকৃত মূল্য চার কোটি ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৫ টাকার পরিবর্তে মাত্র এক কোটি ৫০ লাখ টাকায় জমিটি বিক্রি করে। ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর শরীয়তপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন দাতা হিসেবে জে সরদার করপোরেশনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর ভাই আবদুস সালামের নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন। দলিলে জমি বিক্রির টাকা বুঝে পেয়ে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও বিদ্যালয়ের তহবিলে কোনো টাকা জমা দেওয়া হয়নি। দুই মাস ১৮ দিন পর জমি গ্রহীতাগণ ৭০ লাখ ও ৮০ লাখ টাকার দুটি চেক প্রদান করেন। ওই চেক দুটি বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করা হলে চেকের স্বাক্ষর মিল না থাকায় এবং গ্রহীতার ব্যাংক হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেক দুটি ফেরত প্রদান করে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয় বিষয়টি তদন্ত করে। গত বছর ৬ আগস্ট দুদকের উপরিচালক মলয় কুমার সাহা বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক গাজী মো. শামসুল আরেফিন তদন্ত শেষে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সি, বিদ্যালয়ের সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম হাওলাদার, মজিবুর রহমান হাওলাদার, আইউব আলী মল্লিক, আব্দুল কুদ্দুস মোল্যা, বেগম আলফাতুন্নেছা, সুজন সাহা, সংগীতা সাহা, রণজিৎ কুমার সাহা, জমি গ্রহীতা জাহাঙ্গীর আলম ও আবদুস সালামকে মামলায় অভিযুক্ত করে গত ২৮ মে শরীয়তপুর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে দুদক অভিযোগপত্র দাখিল করে।