‘দল পুনর্গঠনে বাধা দিতেই তারেকের বিরুদ্ধে চার্জশিট’

বিএনপিকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাউন্সিল করার যে প্রস্তুতি চলছে, তা বাধাগ্রস্ত করতেই গাজীপুরের নাশকতার মামলায় হুকুমের আসামি করে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। urgentPhoto
আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন এ অভিযোগ করেন।
দেশে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ হয়ে আছে এমন অভিযোগ করে রিপন জানান, এ বছরের শুরুতে অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ পথে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আন্দোলন চলাকালে সরকারের এজেন্টরা, শাসকদলীয় লোকেরা বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে তার দায় বিরোধী দলের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, ‘নিজেদের সৃষ্ট এসব সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোকে পুঁজি করে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পর্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে হুকুমের আসামি করে মামলা করেছে। মিথ্যা মামলায় বিএনপি নেতৃবৃন্দ কারাগারে, অনেক নেতার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়েছে, চার্জশিট প্রদান করে আমাদের নেতৃত্বকে ভীষণ চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে, যাতে করে পার্টি চেয়ারপারসন ঘোষিত দলের পুনর্গঠন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল (মঙ্গলবার) দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও গাজীপুরের একটি সাজানো সন্ত্রাসী ঘটনায় তাঁকে হুকুমের আসামি করে চার্জশিট দিয়েছে। অথচ দেশবাসী জানে, তারেক রহমান সুচিকিৎসা নেওয়ার উদ্দেশে আদালতের অনুমতি নিয়ে বিদেশে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরকারের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’
দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান রক্ষায় এ ধরনের রাজনৈতিক কৌশল কোনো সমাধান দেবে না বলে মন্তব্য করেন রিপন।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক এসব পদক্ষেপ থেকে সরে এসে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কার্যক্রমে বাধা না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান বিএনপির এই মুখপাত্র।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যমে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘দেশে এখন সরকার ও বিরোধী দলের জন্য দুই ধরনের আইনি প্রয়োগের ঘটনা ঘটছে। যখন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যা, গুমের শিকার হচ্ছেন, আমাদের দাবি সত্ত্বেও সে ক্ষেত্রে কোনো বিচার বিভাগীয় জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি হচ্ছে না এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট এলাকার কোনো কমান্ডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা না হলেও, শাসক দলের কর্মী ক্রসফায়ারের শিকার হওয়ায় র্যাবের কমান্ডিং অফিসার প্রত্যাহৃত হয়েছেন।’
‘দলমত নির্বিশেষে সবার প্রাণের মূল্যের ভিন্নতা না থাকার কথা থাকলেও পরিত্যাপের বিষয় হলো যে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুনের ঘটনার কোনো প্রতিকার দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে না। ঘটনাদৃষ্টে মনে হয়, সরকার বিরোধী দলকে নির্মূল করা এবং প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্বকে বিপর্যস্ত করার অপকৌশলে নিজেদের অনৈতিক ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করে ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দিকেই তারা এখন বেশি মনোযোগী।’
তারেক রহমানের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে তারেক রহমান এর কোনো বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক অভিযোগ এনে তাঁর ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার যে হীন ষড়যন্ত্র চলছে, তার প্রতিবাদে তিনি যে বক্তব্য দেবেন বা দিতে পারতেন। তাঁর সেই সাংবিধানিক অধিকারটি পর্যন্ত ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদানের পর এর বিচারিক প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে একপেশে হওয়ারই আশঙ্কা থাকছে এবং তিনি যে ন্যায়বিচার পাবেন না সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এটি ব্যক্তির মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বৈ অন্য কিছু নয়।’
এ সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গঠিত চার্জশিট প্রত্যাহার ও বাতিলের দাবি জানানো হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।
রিপন বলেন, ‘প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলবাজ লোকদের ব্যক্তিস্বার্থের সব উসকানির ব্যাপারে সরকার সচেতন থেকে বিরোধী নেতৃত্বকে হেয়প্রতিপন্ন করার বা হয়রানির পদক্ষেপ থেকে সরকার সরে এসে সবার অংশগ্রহণে একটি আশু জাতীয় নির্বাচন দিয়ে দেশের মৃতপ্রায় গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারে সবাই একযোগে কাজ করবেন সে কথাটি আমাদের সবাইকে জরুরিভাবে ভাবতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দলের মুখপাত্র বলেন, ‘বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সব বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাবে। দলের কাউন্সিলের তারিখ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন উপযুক্ত সময়েই ঘোষণা করবেন।’