‘মা বুলাইবো কে?’ দুই ছেলেকে হারিয়ে মায়ের আর্তনাদ
‘মা বুলাইব কে? মা বুলাইব কে? আমার জাদুগোরে আমার কাছে আনি দেন’-এমনই করে আর্তনাদ করে চলেছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর লরেন্স গ্রামের এক মা, রওশন আক্তার। দুই ছেলেকে হারিয়ে অবিরাম কেঁদে চলেছেন তিনি।
একটু স্বচ্ছল জীবনযাপনের জন্যে দুই ছেলে জসিম উদ্দিন ও মো. ইব্রাহিমকে সৌদি আরব পাঠিয়েছিল এই পরিবার। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মারা যায় এই দুই ভাইসহ ছয় বাংলাদেশি। ভিডিও কলের মাধ্যমে মৃত ছেলেদের দেখেছেন মা। এক ছেলের চেহারা চেনা গেলেও, চেনা যাচ্ছিল না অন্যজনের চেহারা। আগুনে ঝলসে গেছে। ঘটনার পর থেকে এই পরিবারে চলছে শোক।
স্বজনরা জানায়, চার বছর আগে জসিম উদ্দিন সৌদি আরবে যান। এর দুই বছর পর ছোট ভাই ইব্রাহিম হোসেনও সেখানে যান। এর আগে তাঁদের বাবা নেছার আহমদ একই জায়গায় কাজ করতেন। দুই ভাই ও বাবাসহ তিনজনে সৌদি আরবের আল হোলাইফা শহরে লেপ-তোষকের ব্যবসা করতেন। অন্যদের সঙ্গে তাঁরা তিনজনও একই বাসায় থাকতেন।
মঙ্গলবার রাতে বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এ সময় বাবা নেছার আহমদ বাসার বাইরে থাকায় বেঁচে যান। কিন্তু বিস্ফোরণে মারা যান তাঁর দুই ছেলে জসিম উদ্দিন ও ইব্রাহিম হোসেনসহ ছয় বাংলাদেশি।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সৌদি আরবের আল হোলাইফা শহরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার জসিম উদ্দিন ও তাঁর ভাই মো. ইব্রাহিম। ছবি : সংগৃহীত
স্বজনরা জানান, মাত্র তিন মাস আগে জসিম উদ্দিন ছুটি নিয়ে দেশে এসে বিয়ে করেন। এরপর আবার কর্মস্থলে ফিরে যান। দুই ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল, পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন, দুই বোনকে বিয়ে দিবেন। কিন্তু এখন এই পরিবারকে কে দেখবে? এমন সব কথা বলে বিলাপ করছিলেন বৃদ্ধা মা।
লাশ যাতে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এ ব্যাপারে এখন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।
নিহতদের চাচা নজির আহম্মদ বলেন, ‘১৭ তারিখ দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সৌদি আরবের আল হোলাইফা শহরে আমার দুই ভাতিজা জসিম উদ্দিন ও ইব্রাহিম আগুনে পুড়ে মারা গেছে। ওইখান থেকে ভিডিওর মাধ্যমে আমাদেরকে দেখাইছে যে, বাহির থেকে আগুন লাগছে। তাঁরা বাইর হওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এমন কি তাঁরা আগুনে পুড়ে সাথে সাথেই মারা গেছে। জসিমকে চেনা যায়, ইব্রাহিমকে যেভাবে আমরা ভিডিও দেখছি, তার চেহারা পর্যন্ত চেনা যায় না। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এবং সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, তাড়াতাড়ি যেন তাদেরকে দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়।’
জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল ও পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।