লিবিয়ার ট্রলারডুবির খবরে শরীয়তপুরে কান্নার রোল
ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ার উপকূলে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ বাংলাদেশিদের মধ্যে শরীয়তপুরের কয়েক যুবক রয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।
লিবিয়াপ্রবাসী কারো কারো পরিবার দাবি করেছে, সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার ট্রলারে উঠার আগে ‘নিখোঁজদের’ সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। কিন্তু ট্রলারডুবির পর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই তাঁরা আশঙ্কা করছেন, প্রবাসী স্বজনরা হয়তো ওই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। ওই সব পরিবারে চলছে কান্নার রোল।
তবে জেলা প্রশাসন বলছে, জেলার চার যুবক ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে বলে তারা গণমাধ্যমে জনতে পেরেছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো সরকারি কোনো কাগজপত্র তারা পায়নি।
নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের কাজীর শুকুর গ্রামের জাকির হোসেন কাজীর (৪০) পরিবার জানায়, চার বছর আগে কাজের সন্ধানে মিসর যান জাকির। সেখানে ভালো কাজ না পাওয়ায় দুই বছর আগে লিবিয়া পাড়ি জমান। লিবিয়ার বেনগাজী শহরে থাকতের তিনি। জাকিরের হোসেন গাজীর সঙ্গেই ছিলেন তাঁর আত্মীয় একই গ্রামের ইয়াকুব হাওলাদার (২২) ও বিল্লাল দেওয়ান (২৪)। শুক্রবার থেকে এ তিনজনের কোনো খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার।
আজ রোববার জাকির হোসেন কাজীর গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তাঁর স্ত্রী মনতারা বেগম কান্না করতে করতে বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। মাটিয়ে গড়িয়ে আহাজারি করছেন। বাড়িতে চলছে স্বজনদের কান্না আর আহাজারি। খবর পেয়ে তাঁদের সমবেদনা জানাতে ছুটি এসেছে গ্রামের মানুষ। তাদের চোখেও জল।
জাকির হোসেন কাজীর স্ত্রী মনতারা বেগম এনটিভি অনলাইনকে জানান, ইতালি যাওয়ার ট্রলারে উঠার আগে তিনজনই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। ট্রলারডুবির পর তাঁদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মনতারা বেগম বলেন, একটু সুখের আশায় ধারদেনা করে তাঁকে (জাকির হোসেন কাজী) বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। চার বছর পার হয়ে গেলেও ঋণের টাকা এখনো শোধ করতে পারিনি। ছেলেমেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছিলাম। এ আমার কী হয়ে গেল! আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। সরকারের কাছে দাবি, তাঁর লাশটা যেন দেশে আনা হয়।
এ ছাড়া একই উপজেলার ভুমখারা গ্রামের নান্নু ঢালীর ছেলে সুমন ঢালী (২৫), রাহাপাড়ার হারুন বেপারীর ছেলে সুমন বেপারী (২৭) ও বাংলাবাজারের সোলায়মান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিনও (৩০) ওই ট্রলারের যাত্রী ছিলেন বলে দাবি করেছে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
সুমন বেপারীর বাবা হারুন বেপারী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পাঁচ লাখ টাকা ঋণ করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। ট্রলারে উঠার আগে ছেলের সঙ্গে কথা হয়। এখন তাঁর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা এখন কী করব?’
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস বলেন, লিবিয়ায় নৌকা ডুবিতে নিহতদের মধ্যে শরীয়তপুরের চারজনের নাম গণমাধ্যমে শুনেছি। এখনো সরকারিভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিখোঁজ বা নিহতদের সম্পর্কে কিছু জানানো হলে, আমরা খোঁজ নেব।