চা নিলাম কেন্দ্র চালু, ১ কেজি চায়ের দাম ১১২০০ টাকা
প্রথম নিলামের দিনেই ভালো দাম। তাই নানা কৌতুহল ওই চা বাগান, ব্রোকার হাউজ ও বায়ারকে নিয়ে। নিলামের পর পরই এই খবর লোক মুখে ছড়ায়। তাই সবারই কৌতুহল আর প্রশ্ন জাগে ওই চা পাতাকে ঘিরে। ওই চা দেখতে কেমন, চায়ের রং কেমন, ঘ্রাণ কেমন, স্বাদ কেমন হবে ইত্যাদি নানা প্রশ্ন।
সোমবার ১৪ মে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান শেষে চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে নিলাম ডাকের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চায়ের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্রে যাত্রা শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় নিলাম ডাকের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। নিলামে সাতটি ব্রোকার্স হাউস অংশ গ্রহণ করে। দিনটি স্মরণীয় রাখতে কেএস ব্রোকার হাউজের ৫৫০ কেজির একটি লট (জিভিওপি) প্রতিকেজি চাপাতা বিক্রি হয় ১১ হাজার ২০০ টাকা। নিলামে ইস্পাহানি কোম্পানি ৫৫০ কেজি চা পাতা কিনে যার প্রতি কেজির দর ১১ হাজার ২০০ টাকা। এই দর বাংলাদেশের চা নিলামে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এর আগে প্রতি কেজি চা পাতা এ রকম দামে বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী ২৬ জুন ও ১৭ জুলাই চায়ের আরো দুটি আন্তর্জাতিক নিলাম শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হবে। চায়ের নিলাম আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান টি প্ল্যান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য সচিব জহর তরফদার এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার বিকেল থেকেই বায়ার ও ব্রোকার্স হাউজের লোকজনের আনাগোনায় জমজমাট হয়ে উঠে শ্রীমঙ্গল। প্রথম নিলাম কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রাকে ঘিরে দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে নানা উদ্যোগ নেন শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। নিলাম কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রাকে স্বাগত জানিয়ে ওই দিন সন্ধ্যার পরপরই তারা আনন্দ র্যালি বের করেন।
জানা যায়, শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপন করে সিলেটের চা সিলেটেই নিলাম করার দাবিতে ৭০ বছর ধরে আন্দোলন হচ্ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকবৃন্দের সম্মেলনে সিলেট বিভাগের পাঁচটি এলাকায় সিলেটে দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চা বোর্ড উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম হোসেনের সভাপতিত্বে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিসহ চা সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে শ্রীমঙ্গলে আরেকটি চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২০১৩ সালের ২২ ও ২৩ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির গঠিত সাব-কমিটির সদস্য ও তৎকালীন সংসদ সদস্য তহুরা আলীর নেতৃত্বে দুজন সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ ও টিপু মুন্সী এবং চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে বলে সুস্পষ্ট মত দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সিলেট বিভাগের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দাবি পূরণ হলো।
সবুজ টি লিমিটেডের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় এই এলাকার ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক সাশ্রয়ী হবে। নামমাত্র পরিবহন খরচে তাদের উৎপাদিত চা শ্রীমঙ্গলস্থ ওয়্যারহাউসে পাঠাতে পারবেন। চায়ের গুণগতমানও ভালো থাকবে। উৎকৃষ্ট মানের চা অর্থাৎ বাগানের উৎপাদিত তাজা চা ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে এবার টেবিলে চলে যাবে। শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় এখন থেকে আর একাধিক পরিবহন খরচ লাগবে না। দ্রুত চায়ের নিলাম কাজ সম্পন্ন হবে এবং খুচরা বাজারে কম সময়ে চা পৌছে যাবে।
সোমবার ৫৫০ কেজির চা পাতার লটটি প্রতি কেজি ১১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হওয়ায় দিনটি সংশ্লিষ্টদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকল। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে প্রথম নিলাম সম্পন্ন হওয়া সবাই আনন্দিত।
ইউনিট ব্রোকার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাত হায়াত জানান, ১৯৪৯ সাল থেকে চট্টগামে চায়ের নিলাম হয়ে আসছে। ওই সময়ে উৎপাদিত চা বেশির ভাগ বিদেশে রপ্তানি হতো। সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম হওয়ায় ওই সময়ে চায়ের নিলাম কেন্দ্র গড়ে ওঠে চটগ্রামে। শ্রীমঙ্গলে এই প্রথম চায়ের নিলাম পরীক্ষামূলক শুরু হয়েছে, সফলতা এলে এই নিলাম কেন্দ্রটি স্থায়ী নিলাম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে।