পিডিবির কাণ্ড : গ্যারেজের বিল কোটি টাকা!

Looks like you've blocked notifications!
পিডিবি রাজশাহীর ভুতুড়ে বিল। ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহীতে একটি সাইকেল মেরামতের দোকানে (গ্যারেজ) বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয়েছে এক কোটি টাকার উপরে। তাও এটি আবার সংশোধিত বিল। জুন মাসের দুই হাজার ৬০০ টাকা বিল সংশোধন করে আগস্ট মাসে এক কোটি ছয় লাখ ২৪ টাকা বিল গ্রাহকের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (পিডিবি)। 

আজ মঙ্গলবার সকালে নগরীর ‘মতিহার সাইকেল গ্যারেজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে আগস্ট মাসের ওই বিদ্যুৎ বিলটি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ভুলবশত হিসাবে গরমিল হয়েছে। কার্যালয়ে বিলটি জমা দিলেই তা ঠিক করে দেওয়া হবে।

‘মতিহার সাইকেল গ্যারেজে’র মালিক আইয়ুব আলী এনটিভি অনলাইনকে জানান, নগরীর মতিহার থানার মাসকাটাদীঘি এলাকায় তাঁর ভাই আশরাফুল আলমের নামে ২২২৬৫৪ নম্বরের একটি বৈদ্যুতিক মিটার রয়েছে। ওই মিটারে তিনি গ্যারেজে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। গড়ে প্রতিমাসে এ মিটারে এক হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। জুন মাসে হঠাৎ তা বেড়ে হয় দুই হাজার ৬০০ টাকা হয়। আবার জুলাই মাসে তা অনেক কমে হয় ১৪২ টাকা। 

জুন মাসের বিল হাতে পেয়ে আইয়ুব আলী  রাজশাহী পিডিবির মিটার রিডার খোশ মোহাম্মদকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। পরে খোশ মোহাম্মদ এসে জুন মাসের বিলটি নিয়ে যান এবং আগস্ট মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন বিল দেওয়ার কথা বলেন। 

আজ সকালে আগস্ট মাসের সংশোধিত বিল দেয় পিডিবি। বিলের কপি হাতে পেয়ে হতবাক হয়ে যান আইয়ুব আলী। বিলে মিটার রিডিংয়ের হিসাবে দেখা যায়, আগের মাসে গ্রাহকের ইউনিট ছিল চার হাজার ৯৭৫। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৪৫ ইউনিটে। অর্থাৎ মোট ব্যবহৃত প্রকৃত ইউনিট ১৭০। এই ১৭০ ইউনিটের বিল দেওয়ার কথা গ্রাহকের। কিন্তু তার পরিবর্তে পিডিবি গ্রাহককে নয় লাখ ৯৯ হাজার ৮৩০ ইউনিটের বিল দিয়েছে। ফলে আগস্ট মাসের বিল গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৬ লাখ ২৪ টাকা।

এ দিকে ভুতুড়ে বিলের বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অনেকেই বিলটি দেখার জন্য আসে।

রাজশাহী পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে যদি এ ধরনের ভুল হয়ে থাকে, বিলটি কার্যালয়ে নিয়ে এলেই সংশোধন করে দেওয়া হবে। 

গ্রাহকদের অভিযোগ, কোনো কোনো মিটার রিডার প্রতিমাসে একই রিডিং অনুযায়ী বিল প্রস্তুত করে থাকেন। মিটার রিডারদের অপতৎপরতার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করা হলে তারা সেটি আমলে নেন না। 

অভিযোগ রয়েছে, মিটারে প্রদর্শিত রিডিংয়ের চেয়েও বেশি রিডিং দেখিয়ে বিল করা হচ্ছে। এ কারণে কারেো কারো বিল বেশি হচ্ছে। মিটার রিডাররা গ্রাহকদের কাছ থেকে অনেক সময় অতিরিক্ত ইউনিটের টাকা আদায় করে থাকেন। অনেক গ্রাহক তাদের মিটারের সঙ্গে রিডিং না মিলিয়ে বিল পরিশোধ করে থাকেন।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) গ্রাহক হয়রানি নতুন কিছু নয়। তারা রীতিমতো গ্রাহকদের মিটার রিডিং না করেই ধারণা করে বিল দিচ্ছে। এতে গ্রাহকরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজশাহীতে যেসব ডিজিটাল মিটার সরবরাহ করা হচ্ছে, তা এ অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য নয়। এই মিটার ব্যবহারের ফলে গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। 

জামাত খান আরো বলেন, গ্রাহকদের বিল সংশোধনের নামে পিডিবির যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্বে অবহেলা করছেন, তাদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে। আর তা না করা হলে রাজশাহীর বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

মিটার রিডারদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রাহকরা এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে এবং সংশ্লিষ্ট মিটার রিডারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।