ঐশীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে তিন যুক্তি

ঐশীর মৃত্যুদণ্ড না হলে উঠতি বয়সী নেশাগ্রস্তরা উৎসাহ পাবে

Looks like you've blocked notifications!
পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় কারাবান্দি তাদের সন্তান ঐশী রহমান। পুরোনো ছবি

পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় এই দম্পতির সন্তান ঐশী রহমানকে হাইকোর্টের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিলে তিনটি যুক্তি দেখিয়ে ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে।

প্রথম যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, ঐশী রহমান অভ্যাসগতভাবেই নেশাগ্রস্ত ছিল। বাবা-মাকে সে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করেছে। তাঁর প্রমাণ কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাঁদের অচেতন করে ফেলা। এরপরই সে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ বিষয়টি সে নিজেই জবানবন্দি দেওয়ার সময় স্বীকার করেছে। সে ছিল মূলত ঠান্ডা মাথার খুনি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসব ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। তাই সে কোনো ধরনের সহানুভূতি পেতে পারে না বলে মনে করে রাষ্ট্রপক্ষ।

দ্বিতীয় যুক্তিতে বলা হয়, ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড কমানো হলে দেশের উঠতি বয়সী নেশাগ্রস্থ যুবক–যুবতীরা উৎসাহ পেয়ে যাবে। নতুন প্রজন্ম মনে করবে নেশাগ্রস্ত হয়ে বা মাতাল অবস্থায় খুন করলে শাস্তি হবে না। বিচার অঙ্গনেও মামলাটি নজির হয়ে যাবে। একইসঙ্গে অপরাধীরা দেশের বিদ্যমান আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবে। তাই ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখতে হবে।

তৃতীয় যুক্তিতে বলা হয়, ঐশী রহমানের নাবালক ছোট একটি ভাই রয়েছে। তার নাম ঐহী রহমান। বাবা-মা হত্যার ফলে এ বাচ্চাটি অসহায় হয়ে পড়েছে। তাঁকে লালন-পালন করার মতো কেউ নেই। ছোট বাচ্চাটিকে এখন কে দেখবে, তাঁর কি দোষ। নিম্ন আদালতে ঐশীর মৃত্যুদেণ্ডর সময় তার ছোট ভাইয়ের বয়স ছিলো মাত্র আট বছর। ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। নেশাগ্রস্ত একজনের কারণে অপরজনের জীবন এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তাই ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখতে হবে।

এসব যুক্তি ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা আবেদনে বলা হয়, ঘটনার সময় ঐশী রহমান একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ছিলো। ওই সময় দেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় এ ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সবাই বিস্ময় প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছে। এখন যদি তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি থেকে বাদ দেওয়া হয় তাহলে আদালতের ন্যায় বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

আজ সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড সুফিয়া খাতুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিচারিক আদালত ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন, কিন্তু হাইকোর্ট যাবজ্জীবন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আপিল করা হয়েছে। আপিলে ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে। কবে আপিল করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ১৮ এপ্রিল আপিল করা হয়েছে। তবে আজকে বিষয়টি জানাজানি হয়।

এদিকে, ঐশী রহমানের খালাস চেয়ে আপিল করেছেন তাঁর আইনজীবী আফজাল এইচ খান। গত মাসেই এ আবেদন করা হয়েছে দাবি করে এনটিভি অনলাইনকে আফজাল এইচ খান বলেন, ‘হাইকোর্ট ঐশী রহমানের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দিয়েছিল, আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। আপিলে তার খালাস আবেদন করেছি। শুনানি হতে আরো দুই বছর সময় লাগতে পারে।’

গত বছরের ৫ জুন ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজার দণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও নিজামুল হক নিজাম।

অন্যদিকে, আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী আফজাল এইচ খান ও সুজিত চ্যাটার্জি। এরপর গত ৭ মে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।

এর আগে পুলিশ দম্পতি হত্যা মামলায় তাদের একমাত্র মেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ঐশী। পরে ১২ মার্চ এই মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আদালত। পরে ৫ জুন রায় ঘোষণা করেন আদালত। গত ২২ অক্টোবর এই মামলায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়।

২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজ বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখা (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মা-বাবা খুন হওয়ার পর পালিয়ে যান ঐশী। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই দিন ঐশী রহমান রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি।

২০১৪ সালের ৯ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবুল খায়ের মাতুব্বর আসামিদের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আমামিদের মধ্যে গৃহকর্মী সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিশোর আইনে এবং ঐশীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অরেকটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। সুমির মামলার বিচার কার্যক্রম কিশোর আদালতে পরিচালনা হচ্ছে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধান আসামি ঐশী রহমানকে ডাবল মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আদালত। অপর দুই আসামি ঐশীর বন্ধু রনিকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও জনিকে খালাস দেওয়া হয়।